।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্রের তীরে লাখো মানুষের ঢল। সম্পন্ন হলো অষ্টমীর স্নান। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে এবারে বুধবারে স্নান অনুষ্ঠিত হওয়ায় বুধে অষ্টমীর স্নান বলা হয় এবং বেশ গুরত্বপূর্ন হওয়ায় এবারে লোক সংখ্যা অনেক বেশি হয়েছিল। এবারে মুল স্নান উৎসব স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল রাজারভিটা এলাকায়। লাখো লাখো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পদভারে মুখোরিত ছিল ব্রহ্মপুত্র তীর।
আয়োজক কমিটি জানায়, এবারে অষ্টমী তিথি মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাত ৯ টা ১৭ মিনিট ৩ সেকেন্ড থেকে শুরু হয় এবং বুধবার (২৯ মার্চ) রাত ১০ টা ৪৭ মিনিট, ১৩ সেকেন্ড পর্যন্ত চলবে। বুধে অষ্টমীর হওয়ায় এবারে ৫ লাখেরও অধিক পূণ্যার্থী যোগ দিয়েছিল। চিলমারীর ব্রহ্মপুত্রের পাড়ের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছিল স্নান উৎসব। “হে মহা ভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য, তুমি আমার পাপ হরণ করো” এ মন্ত্র উচ্চারণ করে পূণ্যার্থীরা কৃপা চান ব্রহ্মার। স্নান উৎসবে মেতে উঠেন পূণ্যার্থীরা।
গত কয়েকদিন থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পূণ্যার্থীরা ভিড় জমান চিলমারী বন্দর ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে। সড়ক পথে বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, নচিমনে, অটোতে ও মোটরগাড়ি করে। নদী পথে ট্রলার ও নৌকাযোগে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে পূণ্যার্থীরা সমবেত হন চিলমারীর ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে।
উৎসব কমিটির নেতারা বলেন, প্রতি বছরের মত এবারও ভারতসহ ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুলসংখ্যক পূণ্যার্থী যোগ দিয়েছেন স্নান উৎসবে। কোন নির্দিষ্ট ঘাট না থাকায় উমুক্ত স্নানঘাটের মাধ্যমে পূণ্যার্থীরা স্নানপর্ব সম্পন্ন করেছেন। স্নান ও মেলা উপলক্ষে রমনা ঘাট, নদী বন্দর ঘাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বালুচর এলাকায় বসেছে সার্কাস ও ভাওয়াইয়া গানের আসর। বাঁশির সুর, ঢোলের শব্দ ও নারী-পুরুষের পদচারণায় মুখরিত ছিল চরাঞ্চল। স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে তিনদন ব্যাপী লোকজ মেলা।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, পূণ্যার্থীদের কল্যাণে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ঘাটের পাশেই নারী দের কাপড় বদলানোর জন্য বুথের ব্যাবস্থা করা হয়েছিল। টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় ৩০/৪০টি ধর্মীয় সামাজিক ও সেবা মূলক সংঘঠন ক্যাম্প খোলা হয়েছিল। এ ছাড়াও নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছিল। নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ভিডিপির পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করাসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশী পাহাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অপর দিকে স্নান উৎসব উপলক্ষে উপজেলা চেয়াম্যান রুকুনুজ্জামান শাহিনসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ স্নান উৎসব কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।
কথা হয় স্নান দিতে আসা ধিরেন্দ্র নাথ, সৌরভী, শ্রী লতা রানীসহ অনেকের সাথে তারা বলেন, এবারের ব্যবস্থা অনেক ভালো তবে স্নানের জন্য নিদিষ্ট কোন ঘাট না থাকায় কিছুটা সমস্যাও হচ্ছে। আবার অনেকে অভিযোগ করে বলে নিরাপত্ত্বা ব্যবস্থা তেমন ভালো ছিলনা।
উৎসব কমিটির আহবায়ক বিষু কুমার বর্মণ জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে পুণ্যার্থীরা অষ্টমী স্নান মেলায় এসেছিল। এবার ৫ লাখেরও বেশি পুণ্যার্থীর সমাগম হয়েছে বলে আশা করা হচ্ছে।
//নিউজ/চিলমারী//সোহেল/মার্চ/২৯/২৩