।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে গত দুই দিনে একাধিক মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দির থেকে প্রতিমা তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গল ও বুধবার (১৪ ও ১৫ মার্চ) দিবাগত মধ্যরাতে উপজেলার পৌর এলাকার যোদ্দারপাড়া ও খেওয়ারপাড়ে অবস্থিত উলিপুর কেন্দ্রীয় শ্মশান মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তীব্র ক্ষোভের পাশাপাশি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকালে উলিপুরের ঘটনাস্থলগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, যোদ্দারপাড়ার সন্ন্যাসীতলা মন্দিরের কালী প্রতিমাটি মন্দিরের নির্ধারিত স্থানে নেই। মন্দিরের ভেতরে পায়ের ছাপ। পাশে কয়েকটি স্থানে প্রতিমার ভাঙ্গা টুকরা ও এক গুচ্ছ চুল পড়ে আছে।
স্থানীয় যুবক শৌমিক জানান, মন্দিরটি প্রায় সারা বছর তালাবদ্ধ থাকে। ভক্তরা প্রতিদিন বাইরে থেকে ঠাকুরকে পূজা দিয়ে যান। মন্দিরের গ্রিলের ওপরের ফাঁকা জায়গা দিয়ে কেউ ভিতরে প্রবেশ করে প্রতিমাটি নিয়ে গেছে। বাইরে সিসি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। সেগুলোর ফুটেজ পরীক্ষা করলে আগুন্তুককে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
সন্ন্যাসীতলা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দেব ধ্রুব বলেন, প্রতিদিনের মতো সকালে পূজা করতে গিয়ে দেখি মন্দিরের প্রতিমা উধাও। আশেপাশে প্রতিমার টুকরা পড়ে আছে। এটা খুবই দুঃখজনক।
তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় সকল ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির সাথে বাস করি। এধরণের কাজ স্থানীয় কেউ করেনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পরিকল্পিত ভাবে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙা হচ্ছে।
সন্ন্যাসীতলা মন্দিরের কিছুদূর দক্ষিণে বটতলা মন্দির। ওই মন্দিরের একাধিক প্রতিমা ভাঙ্গা হয়েছে। কালী প্রতিমার নিচের বড় অংশ জুড়ে ভাঙ্গা। এই মন্দিরের প্রতিমা দেখান স্থানীয় নারী টুকু রানী।
তিনি জানান, মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে তারা মন্দিরের কালী প্রতিমা ভাঙা দেখতে পান। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
স্থানীয় হিন্দুরা বলছেন, মন্দিরের গ্রিল তালা দেওয়া থাকলেও গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বাঁশ ঢুকিয়ে খোঁচা মেরে প্রতিমা ভাঙ্গা হয়েছে। স্থানীয় বসতি ও সড়কের পাশের এই মন্দিরের প্রতিমা ভাঙ্গায় স্থানীয়রা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ওই এলাকার যুবক শাওন বলেন, ‘কোন দুনিয়াত আসলাম। এভাবে চলতে পারে না। বাইরের কোনও গ্রুপ এলাকায় এসে এ কাজ করে থাকতে পারে। স্থানীয় কারও এমন সাহস করার কথা নয়।’
আরেক যুবক প্রিতম বলেন, পরশু (মঙ্গলবার) রাত সাড়ে ১২ টার দিকে অল্প বয়সি এক ছেলেকে বাঁশ নিয়ে যেতে দেখেছি। সেই ছেলে এই কাজ করে থাকতে পারে। তবে আমি নিশ্চিত নই।
বটতলা মন্দির কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় যুবক শৌমিক বলেন, ‘শহরের ব্যস্ততম জায়গায় এ ধরণের ঘটনা কোনও ভাবে কাম্য নয়। আগে ভাবতাম আমাদের এলাকায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কখনও এমন হামলা হবে না। কিন্তু ২০২১ সালের পর থেকে আমরা আতঙ্কিত থাকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হঠাৎ করে আবারও এ ধরণের ঘটনা সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উষ্কানিমূলক হতে পারে। আমরা শঙ্কিত।’
ওই মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কোনও একটি মহল পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে এই কাজ করছে। স্থানীয় কারও ইন্ধনে বাইরের কোনও গোষ্ঠী পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক ভাবে মন্দিরে হামলা চালাচ্ছে।
উপজেলার কেন্দ্রীয় শ্মশান মন্দিরের কালী প্রতিমাও ভাঙচুর করা হয়েছে। দিনের বেলা শ্মশান এলাকায় লোক সমাগম থাকলেও রাতে থাকে সুনশান নিরবতা। কিন্তু সেখানেও পৌঁছেছে দুষ্কৃতকারীরা। ওই মন্দিরের কালী প্রতিমাসহ একাধিক প্রতিমা লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে মন্দির দেখতে গিয়ে ক্ষোভ জানালেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষরা। তারা বলছেন, এটা উদ্দেশ্যমূলক ভাবে ঘটনো হয়েছে। সবগুলো মন্দিরে হামলার পেছনে একই গোষ্ঠির হাত রয়েছে।
শ্মশান কালী মন্দিরে ভেঙ্গে ফেলা প্রতিমা দেখতে যাওয়া যোদ্দার পাড়ার পাখি রানী বলেন, এটা কোনও সুস্থ মানুষের কাজ হতে পারে না।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উলিপুর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে গবা বলেন, একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে এসব কর্মকান্ড করছে। প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় আমরা খুব মনোকষ্ট পেয়েছি। বিষয়টি আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করেছি। তারা জড়িত ব্যাক্তিদের চিহ্নিত করতে কাজ করছেন।
ওসি শেখ আশরাফুজ্জামান বলেন, আমরা পরিস্থিতি গুরুত্বের সাথে দেখছি। জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টার পাশাপাশি উপজেলার সকল মন্দিরের নিরাপত্তা বাড়াতে আমাদের লোকজন মাঠে কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২১ সালে শারদীয় দূর্গা উৎসব চলাকালীন সময়ে উলিপুরের বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী ও অস্থায়ী কয়েকটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। ওই ঘটনায় একাধিক মামলা হয়। মামলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
//নিউজ/উলিপুর//চন্দন/মার্চ/১৬/২৩