।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
দুস্থ, হতদরিদ্র্য ও এতিমদের জন্য সৌদি সরকারের দেওয়া কোরবানির পশুর মাংসে প্রভাবশালী, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের ভাগ বসানোর অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১৫ মার্চ) চিলমারীতে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উপজেলা শহরে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্র জানায়, জেলার ৯ উপজেলার জন্য সৌদি সরকারের দেওয়া ১৭৭ কার্টুন কোরবানির পশুর মাংস বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চিলমারী উপজেলায় ১২ কার্টুন মাংস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব মাংস জেলার বিভিন্ন এতিম খানা, লিল্লাহ বোর্ডিং সহ দুস্থদের মাঝে বিতরণ করার কথা থাকলে বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
বিভিন্ন সূত্র জানান, কয়েক বছর পর সৌদি সরকারের দেওয়া কোরবানির মাংস চিলমারীতে পৌঁছালেও তা হতদরিদ্র্য ও বঞ্চিতদের মাঝে বিতরণ না করে সেসবে জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাংবাদিকরা ভাগ বসিয়েছেন। বরাদ্দের ১২ কার্টুন মাংসের মধ্যে ৬ কার্টুন মাংস ছয় ইউনিয়ন পরিষদে দেওয়া হয়েছে। বাকি ছয় কার্টুন মাংস জনপ্রতিনিধি, উপজেলার প্রেসক্লাবের সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতাকর্মীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এসব মাংস বরাদ্দের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যহত হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে কোনও কিছু অবগত নন বলে জানিয়েছেন চিলমারী আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম লিচু। তিনি বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক কাজে ঢাকায় ছিলাম। এ বিষয়ে কিছু জানি না।’
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামান শাহীন দুস্থ ও হতদরিদ্র্য মানুষ সহ সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে মাংস বিতরণের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ জনপ্রতিনিধিদেরকে তাদের এলাকার দুস্থদের মাঝে বিতরণের উদ্দেশ্যে মাংসের কার্টুন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা পরিষদের স্টাফ, সাংবাদিক ও দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝেও মাংস বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
জেলার অন্য উপজেলাগুলোতে এতিম ও দুস্থদের মাঝে মাংস বিতরণ করা হলেও চিলমারীতে সাংবাদিক ও দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য কেন? এমন প্রশ্নে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখানে (চিলমারীতে) দীর্ঘদিন ধরে এই চর্চা চলে আসছে। তাই আমি নতুন করে কিছু বলিনি।’
নিজে সদস্য হলেও দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত এসব মাংস নেননি জানিয়ে চিলমারী প্রেসক্লাবের সদস্য মমিনুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। এই মাংসে সম্পুর্ণ অধিকার হলো দুস্থ, অভাবগ্রস্থ ও এতিমদের। এই উদ্দেশ্যেই এসব মাংস বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেসব মাংসে সাংবাদিক ও রাজনৈতিক দলের ভাগ বসানো লজ্জাজনক। এটা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। এই মাংস সাংবাদিকরা না নিলেও পারতেন।
চিলমারী প্রেসক্লাবের সভাপতি মনিরুল আলম লিটু মাংস পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্লাবে মাংস পেয়েছি। এগুলো নেওয়া ঠিক নয়। তবে আমাদেরকে ডেকে দিয়েছে।’
বিষয়টি প্রচার হলে পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান জোড়গাছ আশ্রয়ণ কেন্দ্র, বাধ ও শরীরের হাট এতিম খানায় কিছু মাংস বিতরণ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের কে দিয়ে গরিব ও দুস্থদের কে দেয়া হয়েছে । মাংস সঠিক ভাবে বিতরণ করা হয়েছে।
//নিউজ/চিলমারী//সোহেল/মার্চ/১৬/২৩