।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিটন মিয়া গত তিনদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদে যাচ্ছেন না। এতে সেবা বঞ্চিত হয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে ইউনিয়নবাসী। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদের গিয়ে চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় তিনি গত তিনদিন ধরে আত্মগোপনে আছেন।
কুড়িগ্রাম জজ আদালত সূত্রে জানা গেছে, চেক ডিজঅনারের (এনআই অ্যাক্ট) দুটি মামলায় পৃথক ভাবে চেয়ারম্যানকে এক বছর করে কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। একই সাথে দুই মামলায় তাকে এগারো লক্ষ টাকা অর্থদন্ডও দেওয়া হয়েছে। কুড়িগ্রাম জজ আদালতের যুগ্ম দায়রা জজ (প্রথম আদালত) মো. হাবিবুর রহমান গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এই আদেশ দেন। দন্ডপ্রাপ্ত লিটন মিয়া পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী শামসুজ্জামান রুবেল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আদালতের সেরেস্তাদার আকতার আহসান হাবীব কাজল জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) লিটন মিয়ার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে রায় ঘোষণা ও পরোয়ানা জারি হলেও দীর্ঘ একমাস পর পরোয়ানার কপি পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। পরোয়ানা পৌঁছার খবরে লিটন মিয়া পরিষদে যাওয়া বন্ধ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত সাজাপ্রাপ্ত লিটন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা গেছে সেবা প্রত্যাশীরা বিভিন্ন আবেদন নিয়ে গিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ সহ বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ইউনিয়নবাসী। অনেকে বাধ্য হয়ে আবেদন জমা রেখে যাচ্ছেন।
সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে যাওয়া ওই ইউনিয়নের সবুজ মিয়া ও রঞ্জু মিয়া বলেন, ‘জন্মনিবন্ধনের আবেদন নিয়ে এসে দেখি চেয়ারম্যান নাই। বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছি। আমাদের মতো অনেকে ফিরে যাচ্ছে।’
প্রত্যয়ন নিতে যাওয়া তাজুল ইসলাম প্রত্যয়নপত্র পরিষদে নথিভুক্ত করলেও চেয়ারম্যান না থাকায় অসম্পূর্ণ প্রত্যয়ন নিয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন। চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যাক্তিগত ভাবে দেখা করে স্বাক্ষর নিব।’
বেলগাছা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য সাগর চৌধুরী বলেন, ‘চেয়ারম্যান কয়েকদিন থেকে পরিষদে আসছেন না। এতে করে জনগণকে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। বিদিকিস্তি অবস্থা। আমরাও খুব যন্ত্রণায় আছি।’
১ নং ওয়ার্ড সদস্য তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘চেয়ারম্যান যা শুরু করছে তাতে ইউনিয়ন পরিষদ বেঁচে খাবে। তিনি নিয়মিত আসেন না। ইউনিয়নবাসীর বিভিন্ন ট্যাক্সের টাকা উত্তোলন করে তিনি অ্যাকাউন্টে জমা না করে আত্মসাত করেছেন। এখন সাজা হওয়ায় কয়েকদিন থেকে পরিষদেও আসতেছেন না।’
বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকার কারণে জন্মনিবন্ধন করতে সমস্যা হচ্ছিল। পরে সোমবার রাতে তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ সম্ভব হলে তিনি সনদের কাগজে স্বাক্ষর করে সেগুলো লোক মারফত পাঠিয়েছেন। ’
সার্বিক বিষয়ে জানতে সাজাপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাজার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি জরিমানার পঞ্চাশ ভাগ টাকা জোগাড় করে আদালতে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। বিষয়টি আমি আইনগত ভাবে মোকাবিলা করবো।’
পরিষদে না যাওয়ার ও জনভোগান্তির বিষয়ে লিটন মিয়া বলেন, ‘আমি প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছি।’ তবে ইউনিয়নের ট্যাক্সের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন এই ইউপি চেয়ারম্যান।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
//নিউজ/কুড়িগ্রাম//চন্দন/মার্চ/১৫/২৩