।। লাইফস্টাইল ডেস্ক ।।
অফিসে থাকলেও দুপুরের খাবারের পর একটু জিরিয়ে নেওয়ার অভ্যাস অনেকেরই আছে। “খাবার খেলেই যেন শরীরটা ছেড়ে দেয়” – এই কথাটি বাঙালির কাছে খুবই পরিচিত। শরীরকে যতো সচল রাখবেন, ততোই সুস্থ থাকবেন। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, খাওয়া শেষে ৩০ মিনিট হাঁটতে পারলে ভালো। বিশেষত রাতের খাবার খাওয়ার পর। এতে করে হজমের কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু আসলেই খাওয়ার পর হাঁটা কি আসল সমাধান? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রিসিশন নিউট্রিশনের অন্তর্গত পারফরম্যান্স নিউট্রিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অ্যাডাম ফেইট বলেন, ‘খাওয়ার পর হাঁটলে দ্রুত নয়, ধীরে হাটবেন। প্রতি মিনিটে ১০০ স্টেপের বেশি নয়। দ্রুত হাঁটলে পরিপাকতন্ত্রে রক্তপ্রবাহ কমে যেতে পারে, কারণ শরীর তখন ক্রিয়াশীল পেশিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এর ফলে হজম বিলম্বিত হতে পারে।’
এখানে খাওয়ার পর হাঁটার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে বলা হলো।
গবেষণা বলছে খাওয়ার পর হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে যে শুধু হজম ভালো হয় তাই নয় যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্যেও খুব উপকারী। তাই যাদের ডায়াবিটিস রয়েছে তাদেরও প্রতিদিন খাওয়ার পর হাঁটার অভ্যাস করা উচিত।
খাওয়ার পর শরীর খাবার ভাঙতে শুরু করে এবং পুষ্টি যেখানে প্রয়োজন সেখানে পাঠিয়ে দেয়। ডা. ডিলগাডো বলেন, ‘হাঁটলে এই প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজ হয়।’ খাবার দ্রুত হজম হলে পেট ফেঁপে যাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। আপনার খাবার খাওয়ার পর আলস্যে সময় কাটানোর অভ্যাস থাকলে এবং প্রায়সময় পেটফাঁপায় ভুগলে, তাহলে খাওয়ার পর একটু হাঁটাহাঁটি করতে পারেন- বিশেষ করে রাতে, কারণ ঘুমের সময় হজম ধীর হয়ে পড়ে।
ডা. ফেইট বলেন, ‘খাওয়ার পর খাবার ভেঙে শক্তিতে রূপান্তর হয়, যা শরীর ব্যবহার করে থাকে।’ আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- রাতে খাওয়ার পর ১০ মিনিট হাঁটলে দিনের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রক্ত শর্করা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। এটা ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো বিপাকীয় সমস্যার ঝুঁকি কমিয়ে ফেলে।’
মায়ো ক্লিনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- শরীরে এন্ডোরফিনের মতো সুখের হরমোন বাড়াতে ১০ মাইল দৌঁড়াতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, ১০ মিনিট হাঁটলেও এসব হরমোন উৎপন্ন হতে পারে। ডা. ডিলগাডো বলেন, ‘রাতে খাওয়ার পর হাঁটলে সুখের হরমোন সেরোটোনিন নিঃসরিত হয়- এই নিউরোট্রান্সমিটার ঘুমের মান বাড়ায়, ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে, শিখন সামর্থ্য ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং সুখানুভূতি বৃদ্ধি করে।’
রাতে খাওয়ার পর হাটলে সংবহন কার্যাবলি বৃদ্ধি পায়। যখন আমরা হাটি, আমাদের শরীর বেশি করে রক্ত পাম্প করে। ডা. ডিলগাডো বলেন, ‘হাঁটলে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা পেশির জন্য প্রয়োজন। কেবল পেশি নয়, প্রান্তীয় অঙ্গ ও বিভিন্ন অর্গানও পর্যাপ্ত রক্ত পেয়ে উপকৃত হয়।সর্বোপরি, সংবহনতন্ত্রের সুস্থতা বজায় থাকে, যার ফলে শরীরের সকল অংশ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে ভালোভাবে কাজ করতে পারে।’
আবার অতিরিক্ত কোন কিছু ভালো না। খুব বেশি হাঁটলে বা ওয়ার্কআউট করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ পেশিগুলোতে অতিরিক্ত বেশি রক্ত সঞ্চালন হয়। এতেও কিন্তু হজমের সমস্যা বাড়ে। তাই নিয়ম করে হাঁটুন।