।। নিউজ ডেস্ক ।।
বাংলাদেশের বহু মানুষ এখনো নিরক্ষর। এই মানুষদের অনেক গল্প আছে- কোনোটা শোনা, কোনোটা বানানো, কোনোটা নিজের। এই মানুষরা মুখে মুখে এই গল্প শোনাতে পছন্দ করে। কিন্তু লিখতে না পারায় তাঁদের সে গল্প হারিয়ে যাবে মৃত্যুর সাথে সাথে।
গল্প আজীবন রেখে যাওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে বই। যারা লিখতে জানে না, তাদেরও ইচ্ছে হয় নিজের গল্পটা ছাপার অক্ষরে দেখতে। কিন্তু, অক্ষরজ্ঞান নেই বলে সেই মানুষদের জন্য এই স্বপ্নটা যেন আকাশ-কুসুম এক কল্পনা। সে গল্প কখনো কখনো প্রকাশ পায় শিক্ষিত মানুষের সম্পাদিত সংকলনে। যার ক্রেডিট কিংবা সম্মানী কোনটাই তাঁরা পায় না। তাই নিরক্ষর মানুষগুলো আজীবন বন্দী থেকে যায় শিক্ষিত মানুষের লেখা চরিত্রে।
কিন্তু নিরক্ষর মানুষদেরও গল্প প্রকাশের ও গল্পের দাম পাওয়ার অধিকার আছে বলে বিশ্বাস করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। তাঁরা এই বৃত্তটি ভাঙ্গতে চায়, লেখার কলমের নিয়ন্ত্রণ দিতে চায় অক্ষর জ্ঞান হীন মানুষকেও। সেজন্যই স্বেচ্ছাসেবীরা দেশের আনাচে-কানাচে গিয়ে নিরক্ষর মানুষদের গল্প সংগ্রহ করেছেন। সংকলন ও প্রচ্ছদ শেষে ১২ জন নিরক্ষর মানুষের গল্প নিয়ে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে বিদ্যানন্দ প্রকাশনীর অনন্য বই- “নিরক্ষরের গল্পগুচ্ছ”।
এই বইটির মাধ্যমে হাজার বছরের বাঁধা পেড়িয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন নিরক্ষর মানুষরা। তাঁদের খেয়ালি কথায় চিত্রায়িত হচ্ছে শিক্ষিত মানুষের চরিত্রও। এই যেন এক কলমের মুক্তি, কিছু মানুষের রচনার স্বাধীনতা।
যেসব মানুষ লিখতে জানে না বা লেখার সুযোগ নেই- তাদের লেখকের সম্মান দিয়েছে বিদ্যানন্দের এই উদ্যোগ। এই কাজটি করার জন্য প্রথমেই বিদ্যানন্দ লেখক ও ভলান্টিয়ারদের টিম তৈরি করা হয়েছে। তারা দেশের আনাচে-কানাচে গিয়ে নিরক্ষর মানুষদের গল্প সংগ্রহ করেছেন। তাদের হয়ে এই গল্পগুলো লিখেছেন বিদ্যানন্দ প্রকাশনীর লেখক ও ভলান্টিয়াররা। তারপর এখান থেকে বাছাই করা গল্পগুলো সংকলন করা হয়। এর সাথে সাথে কাজ চলে বইয়ের প্রচ্ছদের। একজন নিরক্ষর দারায়ান ও রিক্সাচালক করেছেন বইয়ের প্রচ্ছদের ডিজাইন। যেখানে শৈল্পিকভাবে উঠে এসেছে নিরক্ষর ও অল্প শিক্ষিত মানুষদের সংগ্রাম।
বিদ্যানন্দের জনসংযোগ প্রধান সালমান খান ইয়াছিন জানান, “বইটির একটি করে কপি লেখকদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিজের গল্প ছাপার অক্ষরে দেখেছেন, ছুঁয়েছেন। যারা নিজেরা লিখতে শেখেননি, তাদের এই আনন্দের অভিজ্ঞতা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। এই বইটির মাধ্যমে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন সামাজিক ব্যবস্থার কারণে সারাজীবন বঞ্চনার শিকার হওয়া নিরক্ষর মানুষরা। শুধু তাই না, গল্পের দামও পাবেন তারা। এই বইটির বিক্রিপ্রাপ্ত লাভের অর্থ পুরোটুকুই রয়্যালটি হিসেবে তুলে দেওয়া হবে এই মানুষদের হাতে।”
অমর একুশে বই মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩৫০ ও বাংলা একাডেমি চত্বরে ৮০৯ নম্বর স্টলে বইটি পাওয়া যাবে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও রংপুরে চলমান বই মেলায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্টলের পাশাপাশি রকমারী সহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যাবে বইটি। শুধু এবারই নয়, প্রতি বছরই এই উদ্যোগটি চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে বিদ্যানন্দের। এভাবেই নিরক্ষর মানুষদের গল্পগুলো পৃথিবীতে থেকে যাবে সবসময়।