।। নিউজ ডেস্ক ।।
গত ২১শে মার্চ ২০২২ সালে কুড়িগ্রামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে মেরুদণ্ডের নিম্নাংশ জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্ম নেয় জমজ শিশু নুহা ও নুবা। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে গত ডিসেম্বরেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। গঠন করা হয় মেডিকেল বোর্ড। অবশেষে রোববার (জানুয়ারি ২৯) তারিখে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রথম ধাপে সফলভাবে সম্পন্ন হয় নুহা ও নুবার অস্ত্রোপচার।
জানা গেছে, বিএসএমএমইউতে রোববার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত নুহা ও নুবার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। এ ছাড়া শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সামন্তলাল সেনসহ আরও ১৫ চিকিৎসক অংশ নেন। এ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নুহা ও নুবার শরীরে টিস্যু বর্ধনকারী চারটি এপপান্ডা ডিভাইস সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশু দুটি এখন ভালো আছে। তাদের হাই কেয়ার ইউনিট বা এইচডিইউতে রাখা হয়েছে। তবে নুহা ও নুবাকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে আরও চার ধাপে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হবে।
অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেওয়া অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘মেরুদণ্ড জোড়া লাগা এ দুই শিশুর অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল, স্পর্শকাতর ও সময়সাপেক্ষ। তাদের আলাদা করতে বেশ কয়েক ধাপে অস্ত্রোপচার লাগবে। নিউরোসার্জন, ইউরোলজিস্টস, শিশু সার্জন, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জন, অ্যানেস্থেশিওলজিস্ট, শিশু পুষ্টিবিদসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের প্রয়োজন হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
তিনি জানান, শিশু দুটির শুধু মেরুদণ্ডই জোড়া লাগানো নয়, তাদের শরীরে আরও জটিলতা আছে। তাদের মূত্রনালি দুটো হলেও পায়ুপথ ও যৌনাঙ্গ একটি। হৃদযন্ত্রেও ছিদ্র পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মেরুদণ্ডের জোড়াটাই একটু বেশি জটিল। এ ছাড়া তাদের জন্মগত ত্রুটিও আছে। ফলে সার্জারি একবারে করা যাবে না। আস্তে আস্তে অপারেশনগুলো করতে হবে।
কুড়িগ্রামের চিকিৎসক ডা. আবদুল হান্নান বলেন, চিকিৎসকদের একটি বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে গিয়ে আমি শিশু দুটির কথা জানতে পেরে আমি দেখতে যাই। অভিভাবকরা তাঁদের বাচ্চা দুটির চিকিৎসা দিতে অনুরোধ করেন। আমি তখন বললাম, তাদের বিএসএমএমইউতে নিয়ে আসেন। ঢাকায় আসার পর বিএসএমএমইউর নিউরোসার্জারি বিভাগে তাদের ভর্তি করে নেওয়া হয়।
নুহা ও নুবার বাবা আলমগীর রানা কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটি পরিবহন কোম্পানির কাউন্টার ম্যানেজার, মা নাসরিন গৃহিণী। তাঁদের প্রথম সন্তান ছেলে। এরপরই জন্ম হয় নুহা ও নুবার। জন্মগত ত্রুটি থাকা সন্তানদের নিয়ে গত ৯ মাস ধরে স্ত্রীকে নিয়ে বিএসএমএমইউতে আছেন রানা। এ কারণে চাকরিটা চলে গেছে। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের পাশাপাশি বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরাও তাঁদের কিছু সহায়তা করছেন।
মেয়েদের চিকিৎসার খরচ নিয়ে রানা বলেন, জমানো কিছু টাকা ছিল, কিছু জিনিসপত্র বিক্রি করেছি। বন্ধুরা কিছু টাকা ধার দিয়েছে। এভাবেই চলছিলাম। এক পর্যায়ে টাকা শেষ হয়ে গেছে। আমাদের যে স্যার নিয়ে এসেছিলেন, তাঁকে বলার পর বাচ্চাদের দুধের খরচটা দিচ্ছেন। বাকি খরচ আমরাই কষ্ট করে চালাচ্ছি। তবে অস্ত্রোপচারসহ চিকিৎসা খরচ নিয়ে রানার দুর্ভাবনা লাঘব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিশু নুহা ও নুবার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি নুহা ও নুবার সার্বক্ষণিক খবর নিচ্ছেন। যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। দুই শিশুর চিকিৎসায় প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ হতে পারে।