।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো: আব্দুল হাই সিদ্দিকীকে মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নূর মোহাম্মদ সাবিরি লিটন নামের এক আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে মারপিটের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিশেষ অভিযান চালিয়ে পুলিশ লিটনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। ঘটনার ৪দিন পর একজন আসামী গ্রেপ্তার হলেও এজাহারভুক্ত অন্য আসামীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ খান মোঃ শাহরিয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আসামী নূর মোহাম্মদ সাবিরি লিটনকে পুলিশ সনাক্ত করেছে। পরে পুলিশের বিশেষ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যান্য আসামীদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে অপরাপর অজ্ঞাত আসামীদের সনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী নূর মোহাম্মদ সাবিরি লিটন কুড়িগ্রাম পৌর শহরের গুয়াতিপাড়া এলাকার মৃত.অব্দুর সাবের মিয়ার পুত্র। এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামীরা হলেন মাসুদ রানা (৪৮), ফরিদুজ্জামান মন্ডল রুমন (৩৫), আমিনুল ইসলাম(৩৯), আলতাফুর রহমান (৪০)।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আহত শিক্ষক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বাদী হয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় বে-আইনী জনতায় দলবদ্ধ হয়ে সরকারি কাজে বাধাদান, সরকারি কর্মচারীকে আক্রমণ আঘাত ও ভয়ভীতির অপরাধের অভিযোগ এনে ১৪৩/১৮৬/৩৫৩/৩৩২/৫০৬ পেনাল কোডে মামলা করেন। প্রভাবশালীদের নানা চাপ উপেক্ষা করে রোববারে ঘটনার মামলা রেকর্ড হয় সোমবার। এরপরই আত্মগোপনে চলে যায় আসামীরা। এজাহারভুক্ত প্রধান আসামী ইতি মধ্যে ভারতে পালিয়েছে বলে ঘনিষ্ঠ সুত্রগুলো দাবী করছেন। আর অন্যরা দেশের মধ্যে আত্মগোপনে।
এ ঘটনায় ১মিনিট ১ সেকেন্ডের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক তার চেয়ারে বসে আছেন। তার উল্টো দিকে মাসুদ রানাসহ কয়েকজন মিলে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আব্দল হাই সিদ্দিকীর ওপর চড়াও হন। এক পর্যায়ে তাকে ধাক্কাতে থাকলে তিনি সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় কয়েকজন শিক্ষক (যার মধ্যে একজন নারী শিক্ষকও রয়েছেন) মাসুদ রানাকে থামাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তারপরও তিনি শিক্ষক আব্দুল হাইয়ের ওপর চড়াও হন এবং ধাক্কাতে থাকেন। এ সময় বেশ কয়েকজন বহিরাগত মাসুদ রানার সাথে শিক্ষকের উপর উত্তেজিত ও মারমুখি অবস্থায় ছিলো।
জানাযায়, ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত নিতে এসে এক পর্যায়ে কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকীর উপর চড়াও হয়ে তাকে মারপিট করেন কুড়িগ্রাম বিএনপি’র সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ রানা। তিনি ভর্তি বাতিল এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসাবে রবিবার (২২ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক’র কক্ষে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটান। এ সময় তার সঙ্গে আরো বেশ কয়েকজন ছিলেন। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা এ দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় নির্যাতিত শিক্ষক বাদি হয়ে ৪জনের নাম উল্লেখ করে এবং কিছু অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
আহত জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী জানান, ঘটনার দিন পিয়নের মুখে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে হট্টগোলের খবর পেয়ে সেখানে যাই। কিছু অভিভাবক তাদের সন্তানের ভর্তি বাতিল বিষয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়। আমি তাদের সাথে কথা বলতে গেলে ১নং আসামী কুড়িগ্রাম মোল্লাপাড়ার ব্যাসায়ী আব্দুল আজিজের পূত্র জেলা বিএনপি ছাত্র বিষয়ক সহ-সম্পাদক মো. মাসুদ রানা প্রথমে আমার উপর চড়াও হয়। এরপর ধাক্কাতে ধাক্কাতে এক কোনায় নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে সবাই মিলে কিলঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিলাফুলা জখম করে। সরকারি কাজে বাধা দেয়। আমি এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আছি এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
তিনি আরো জানান, স্কুলে ভর্তির বিষয়ে অভিভাবকগণ শিক্ষার্থীদের নামে একাধিক আবেদন করায় ঢাকায় মন্ত্রণালয় থেকে ৪২জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে দেয়া হয়। এনিয়ে কিছু অভিভাবক কথা বলতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এরই প্রতিবাদ করায় আমার উপর চড়াও হন অভিভাবক মাসুদ রানাসহ অন্যরা।