।। নিউজ ডেস্ক ।।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাজারে এক টাকা এখন নেহাত মূল্যহীন। প্রায় বিলুপ্তির পথে এক টাকার নোট। দোকানিরা এর চাহিদা সারেন চকোলেট দিয়ে। কেমন হতো যদি অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষেরা মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে ইচ্ছামতো তাদের পছন্দের খাবার খেতে পারতো! সেই ভাবনা থেকেই বিদ্যানন্দের ১ টাকা রেস্টুরেন্টের আবির্ভাব। কুড়িগ্রামের মঙ্গা পীড়িত এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন তৈরি করেছে বিশেষ এই রেস্টুরেন্ট। যেখানে ১ টাকার বিনিময়ে অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষেরা মনোরম ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসে খেতে পারবে তাদের পছন্দের খাবার যা তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে দিবে প্রাণভরে খাবার খাওয়ার তৃপ্তি।
শ্রেণী বৈষম্য সবচেয়ে বেশি দেখি খাবার টেবিলে। বিয়ের মতো সামাজিক আয়োজনেও আত্মীয়তার চেয়েও বড় গুরুত্ব পায় শ্রেণীভেদ। আমরা নিজেরাও যখন কোন অভাবী মানুষকে ভালো রেস্তোরাঁয় নিতে চায়, মালিক বসতে দিতে চান না। একই দাম পরিশোধ করার পরও গরীব গ্রাহকের ভাগে তাচ্ছিল্য জুটে। আমরা চেয়েছি এই ট্যাবুটা ভাঙ্গতে। সেজন্য এই রেস্তোরাঁ।
সমাজে এমন অনেক অসহায়, দরিদ্র এবং গৃহহীন মানুষ রয়েছে যারা তিনবেলা ঠিকমতো খেতে পায় না। দেখা যায় শুধুমাত্র ক্ষুধা মেটানোর জন্য এই অসহায় মানুষদেরকে তাদের আত্মসম্মানবোধ বিসর্জন দিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় খাবারের জন্য। এই খাবার দিয়ে কোনোরকমে পেট ভরলেও, প্রাণভরে খাবার খাওয়ার যে তৃপ্তি সেটা তারা কখনোই পায় না। ফলে পেটের ক্ষুধা পূরণ হলেও মনের ক্ষুধা অপূর্ণই থেকে যায়।
বিদ্যানন্দের আধুনিক ঘরোয়ানা এই রেস্টুরেন্টটি নিশ্চিত করে খাবার খাওয়ার এক মনোরম এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। যেখানে রয়েছে পেশাদার বাবুর্চি, রেস্টুরেন্ট স্টাফ, মেন্যু কার্ড এবং বাহারি সব পুষ্টিকর খাবার। ভাত, মাছ, মাংস, ডাল, সবজি, ডিম, সালাদ, ফল, মিষ্টান্ন, কোল্ড ড্রিংস সহ প্রায় ডজনখানেক আইটেম। রেস্টুরেন্টটিতে এক সাথে বসে খেতে পারেন প্রায় ৫০ জন লোক।
বিদ্যানন্দের এমন একটি উদ্যোগে অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষেরা খুঁজে পায় স্বপ্ন বাস্তব হওয়ার অনুভুতি। তারা এখন এই ১ টাকার রেস্টুরেন্টে মনোরম ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসে মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে ব্যুফে থেকে বাছাই করে খেতে পারে তাদের ইচ্ছা মতো পছন্দের খাবার। আর খাওয়া শেষে তাদের মুখের হাসিতে দেখা যায় এক ধরনের আত্মসম্মানবোধ এবং আত্মতৃপ্তি। খাবারই ভালোবাসা প্রকাশের সর্বোত্তম মাধ্যম। বিদ্যানন্দ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সাথে সে ভালোবাসা শেয়ার করতে চায় এমন খাবার নিশ্চিত করে।
কুড়িগ্রাম জেলার হলোখানা ইউনিয়নের চরসুভারকুঠি গ্রামে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের নিজস্ব জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে নান্দনিক ডিজাইনের এই বিশেষ রেস্টুরেন্ট। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে জনসংযোগ প্রধান সালমান খান ইয়াছিন জানান, ‘বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন এই রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম চলবে। তবে দাতব্য এই কাজে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে প্রতিদিন এই রেস্টুরেন্ট চালানো সম্ভব। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ মানুষ এই রেস্টুরেন্ট থেকে সেবা পাবে বলে আমরা আশা করছি।’ বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, সে করোনা দূর্যোগের সময় প্রথম মেহমানখানা চালু করে পুরান ঢাকায়। এখনো ঢাকায় এবং চট্টগ্রামে চালু আছে এমন আয়োজন। কুড়িগ্রামের এই রেস্টুরেন্ট একটু বড় পরিসরে চালু করা হয়েছে, নিজস্ব জায়গা থাকায়। কুড়িগ্রামের এই রেস্টুরেন্ট একটি মডেল মাত্র। দেশের বিভিন্ন দরিদ্র এলাকায় এই ধরনের কার্যক্রম চালু করা গেলে ক্ষুধায় মানুষের কষ্ট থেকে মুক্তি মেলার পাশাপাশি পুষ্টিজনিত অভাবের রোগ থেকে মুক্তি মিলবে গরীব মানুষের।