।। লাইফস্টাইল ডেস্ক ।।
শীতের সকালে গাছ থেকে নামিয়ে আনা তাজা কাঁচা খেজুরের রস পান করা অনেকেরই পছন্দের। অনেকেই বলে থাকেন, সকালে এক গ্লাস খেজুরের রস শরীরের পক্ষে অনেক উপকারী। তা সত্যি হলেও কাঁচা খেজুরের রস পানেও রয়েছে ভাইরাসে আক্রান্ত হবার জোড় আশঙ্কা। কাঁচা খেজুরের রস পান করে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে এক নারীর মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে গণমাধ্যমগুলোতে। শুধু এই একটি ঘটনা নয়, প্রতিবছর শীতের সময় নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। তাই খেজুরের কাঁচা রস পানের ক্ষেত্রে সতর্কতার কথা বলা হচ্ছে বারবার।
১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ায় প্রথম নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সংক্রমণের উৎস ছিল নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত অসুস্থ শূকর। মালয়েশিয়ার ‘সুঙ্গাই নিপাহ’ নামের একটি গ্রামের নামে এই ভাইরাসের নাম করা হয়। রোগটি যেন মহামারির আকারে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য সে সময় লাখ লাখ শূকর মেরে ফেলা হয়। কারণ, আক্রান্ত শূকর থেকে ভাইরাসটি বাড়ির পোষা কুকুর-বিড়াল, ঘোড়া, ছাগলের দেহেও ছড়িয়ে পড়েছিল। নিপাহ ভাইরাসে সে সময় মালয়েশিয়ায় ২৫৬ জন ‘নিপাহ এনকেফেলাইটিস’ বা মস্তিষ্কের প্রদাহ রোগে আক্রান্ত হয়েছিল, যার মধ্যে ১০৫ জনই মারা যায়।
যেভাবে ছড়ায় নিপাহ ভাইরাস
নিপাহ ভাইরাস প্রাণী থেকে বিশেষ করে বাদুড় ও শূকর থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়ে থাকে। আক্রান্ত বাদুড় কোনো ফল খেলে বা খেজুরের রস পান করলে এটির লালা, প্রস্রাব বা অন্যান্য বর্জ্য দিয়ে সরাসরি সেই ফল বা খেজুরের রস দূষিত হয়ে যায়। কোনো মানুষ যদি সেই ফল খায় বা কাঁচা খেজুরের রস পান করে, তাহলে সে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া আক্রান্ত মানুষের সরাসরি সংস্পর্শে থেকেও আরেকজন সংক্রমিত হতে পারে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এতে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
লক্ষণ ও উপসর্গ
সাধারণত সংক্রমণের ৫–১৪ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। তবে লক্ষণ প্রকাশ না করেও ৪৫ দিন পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় শরীরের মধ্যে থাকতে পারে। প্রাথমিকভাবে প্রচণ্ড জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, বমি, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা যায়। মাথা ঘোরা, ঘন ঘন তৃষ্ণা পাওয়া, ঘুম ঘুম ভাব, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, প্রলাপ বকা ও মস্তিষ্কের তীব্র সংক্রমণজনিত নানাবিধ স্নায়বিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কেউ কেউ নিউমোনিয়া, রক্ত জমাট বাঁধা, বুকে তীব্র যন্ত্রণাসহ তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসে। তাদের দ্বারা এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেকে প্রাথমিকভাবে ভালো হয়ে উঠলেও পরে মস্তিষ্কের বিভিন্ন জটিলতায় ভুগতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার কয়েক বছর পরও তার শরীরে পুনরায় নিপাহ ভাইরাস সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে, যাকে ‘রিল্যাপসিং এনকেফেলাইটিস’ বলা হয়।
যেসব সতর্কতা মানতে হবে
➤ নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের কোনো কার্যকর চিকিৎসা না থাকায় সঠিক রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
➤ কাঁচা খেজুরের রস পান থেকে বিরত থাকুন।
➤ যেকোনো ফল খাওয়ার আগে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
➤ বাদুড় বা অন্য কোনো পাখির আংশিক খাওয়া ফল খাবেন না।
➤ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি বা রুগ্ণ পশু থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।
➤ প্রাণী বিশেষ করে শূকরের খামারে কাজ করার সময় সতর্ক থাকুন।
➤ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্সদের বিশেষ সতর্কতা, যেমন মুখে মাস্ক-গ্লাভস-গাউন ব্যবহার, রোগী দেখার পর হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধোয়া ইত্যাদি অবলম্বন করা উচিত।
➤ রোগীর ব্যবহার করা কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
➤ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর কফ ও থুতু যেখানে-সেখানে না ফেলে একটি পাত্রে রেখে পরে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।