।। নিউজ ডেস্ক ।।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন এমপির পুত্র সাফায়াত বিন জাকির (সৌরভ) এর বিবাহোত্তর বৌ-ভাতের দাওয়াত পালনের জন্য রোববার (৮ জানুয়ারি) রৌমারী রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার ২৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি। এ নিয়ে বইছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়েছে প্রশাসন।
অভিযোগে জানা যায় শিক্ষকদের বাধ্যতামুলক দিতে হয়েছে ৫০০টাকা করে চাঁদা। এক হাজার তিন শত শিক্ষকের কাছ থেকে উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় ৬লাখ টাকা। এ টাকায় ফ্রিজ, স্বর্ণসহ দেয়া হয় দামী দামী উপহার।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম নিজেও মন্ত্রীর ছেলের বিয়ের দাওয়াত পালনের কথা স্বীকার করে বলেন, এই তিন উপজেলায় শৈত্য প্রবাহ বিদ্যমান থাকায় কোমলমতি শিশুদের কষ্টের কথা চিন্তা করে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ নিজেদের ক্ষমতায় একদিনের সংরক্ষিত ছুটি ঘোষণা করেছেন। প্রধান শিক্ষকগণ বছরে ৩দিন ছুটি দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। সেই সংরক্ষিত ছুটি থেকে আজকের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়টি শিক্ষা বিভাগ অবহিত আছে।
তবে অফিসিয়ালী কেউ স্বীকার করছেন না যে মন্ত্রী মহোদয়ের ছেলের বিয়ে উৎসবের কারণে এ সাধারণ ছুটি। শিক্ষার্থী অভিভাবকরা বলছেন অজ্ঞাত কারনে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে ঝুলছে তালা। শিক্ষকরা বলছেন প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে স্কুল ছুটি। এসব নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, ৮ জানুয়ারী রবিবার সরকারি ছুটির দিন না থাকলেও অজ্ঞাত কারণে চিলমারী উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে ঝুলছে তালা। অভিযোগ উঠছে কোন দিবস বা জরুরী কারন ছাড়াই বিদ্যালয় বন্ধ রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা ভিন্ন ভিন্ন কারন দেখালেও এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা বলছে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন ছেলের বিয়ে উপলক্ষে বন্ধ দেয়া হয়েছে।
সরেজমিন রোববার মজাইডাঙ্গা সরকারী প্রাঃ বিদ্যাঃ, দক্ষিণ রাধাবল্লভ, রাণীগঞ্জ বাজার, ফকিরেরহাট, খালেদা শওকত পাটওয়ারী, চর খরখরিয়া, নিরিশিং ভাজ, রানীগঞ্জ মদন মোহন, খরখরিয়া ১নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে একই চিত্র পাওয়া গেছে। সকল প্রতিষ্ঠানে ঝুলছে তালা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষদের সাথে ফোনে কথা হলে অনেকে বলেন, শৈত্য প্রবাহের কারনে আবার অনেকে বলেন সংরক্ষিত ছুটি আবার কেউ কেউ স্বীকার করেছেন প্রতিমন্ত্রী ছেলের বিয়ের দাওয়াতের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে । তবে কোন শিক্ষকই নিজের নাম পরিচয় প্রকাশে রাজি হননি।
ফকিরেরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী বিপুল, আমির হোসেনসহ বেশ কিছু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ছেলের বিয়ে এই জন্য বন্ধ দেয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বাড়ি রৌমারীতে। তিনি কুড়িগ্রাম-৪ আসনের (রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারী) সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। ৮ জানুয়ারি রবিবার প্রতিমন্ত্রীর রৌমারীস্থ বাসভবনে তার একমাত্র ছেলে সাফায়েত বিন জাকিরের বিবাহোত্তর বৌভাত অনুষ্ঠিত হয়।
চিলমারী উপজেলার বালাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বাসিন্দা আব্দুল হাই সরকার বলেন, আজ (রবিবার) কোন সরকারি ছুটি নয়। তারপরও স্কুলে ক্লাস হয়নি। প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়েতে স্কুল বন্ধ রেখে দাওয়াত খেতে যাওয়ায় স্কুল বন্ধ। এটা খুবই দু:খজনক ঘটনা। সরকারের তো একটা নিয়ম আছে। কিন্তু এখানে ক্ষমতার নিয়মই বড় হয়েছে।
অভিভাবক মফিজুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে এই স্কুলে পড়ে। এভাবে স্কুল কামাই করে শিক্ষকরা বিয়ে খেতে যাওয়া হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নাই। এমনি প্রাইমারীতে ক্লাস হয় না ঠিকঠাক ভাবে। মাস্টারও আসে না নিয়মিত। গরিবের ছোয়ার পড়ালেখা হোক আর না হোক তাতে কার কি?
নোয়াব আলী বলেন,সকালে থানাহাট ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা তুলে রেখে শিক্ষকরা সবাই প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বিয়েতে গেছে। আজ কোন ক্লাস হয়নি।
মদন মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার অভিভাবক দিলিপ কুমার ক্ষোভের সাথে বলেন, শিক্ষক খুঁজতে আইছেন তাহলে রৌমারী যান। আজ কোন শিক্ষককে বিয়ের বাড়ি ছাড়া পাওয়া যাবে না। কারণ বিয়েতে অংশ গ্রহন বাধ্যতা মুলক। আর এ জন্য শিক্ষকদের চাদাও দিতে হয়েছে জন প্রতি ৫০০টাকা।
আব্দুস সাত্তার, আব্দুর রহমান বলেন, এটা কেমন কথা প্রতিমন্ত্রীর ছেলে বিয়ের জন্য কি সকল স্কুল বন্ধ রাখতে হবে? এটা কি মগের মুল্লুক নাকি? দেশে আইন কানুন কিছুই নেই?
আরেক শিক্ষক বলেন,আমাদেরকে বলা হয়েছে একটা ক্লাস নিয়ে দাওয়াতে যেতে। তবে কোনও ক্লাস নেওয়া হয়নি। বিয়ের উপহার কেনার জন্য সবার কাছ থেকে ৫শ’ টাকা করে চাওয়া হয়েছিল। পরে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়।
চিলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু সালেহ সরকার বলেন, আমি রৌমারীতে মন্ত্রীর ছেলের বিয়ের দাওয়াতে আছি । এখন ব্যস্ত আছি পরে কথা বলবো।
চিলমারী উপজেলা সরকারি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক আনছারী স্বীকার করেন, শিক্ষা অফিসারের সম্মতিতে প্রধান শিক্ষকগণ স্ব-স্ব বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত ছুটি থেকে একদিনের জন্য সাধরণ ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। সকল শিক্ষক চাঁদা তুলে বিয়ের দাওয়াত খেতে যাই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, তিন উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি চলছে তা তিনি অবহিত হয়েছেন। তিনি বিস্তারিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষকদের হাতে বছরে তিন দিন সংরক্ষিত ছুটি দেবার নিয়ম রয়েছে। তারা বছরের যে কোন সময় এই ছুটি দিতে পারেন।