।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পাট জাতীয় ফসল কেনাফ ফসল চাষ। কম খরচে চাষ করা যায় বলে কেনাফ চাষে ঝুঁকছেন অনেক কৃষক। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চরের পলিমাখা বালুজমিতে কেনাফ বীজ ছিটিয়ে আন্ত:পরিচর্চা, সার, কীটনাশক ছাড়াই আবাদ হচ্ছে ফসলটি। ফলে চরাঞ্চলের মানুষ কেনাফ চাষ করে ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখছেন।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের উৎপাদন আশানুরূপ হওয়ায় এবার ৫শ’ একর জমিতে চাষের টর্গেট নেয়া হয়েছে। চলতি বছর চিলমারী উপজেলায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২শ’ একর জমিতে কেনাফ বীজ আবাদ করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে আরও কেনাফ চাষ বাড়ছে
মূলত: কেনাফ আঁশ থেকে কাগজের পাল্প বা মন্ড তৈরি করে নিউজপ্রিন্ট মিলের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার, কেনাফ খড়ি হার্ডবোর্ড বা পার্টেক্স মিলের কাঁচামাল ও চারকোল তৈরিতে, পশুখাদ্যের কাঁচামাল, তেল উৎপাদন এবং বিদেশে প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন ইনটেরিয়র কাজের ইনস্যুলেটর হিসেবে কেনাফ ব্যবহার সম্ভব।
সূত্র আরও জানায়, প্রতি হেক্টর কেনাফ ফসল বাতাস থেকে প্রায় ১৪.৬৬ টন কার্বনডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং ১০.৬৬ টন অক্সিজেন নিঃসরণ করে বায়ুমন্ডলকে বিশুদ্ধ ও অক্সিজেন সমৃদ্ধ রাখে।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট ২০১৭-১৮ মৌসুমে চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপূত্র নদের দুর্গম চরাঞ্চল বনগ্রামে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে পাট জাতীয় প্রজাতী কেনাফ বীজ চাষ করা হয়। শুরুতেই লাভবান হওয়ায় এবছর বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট ৬টি ব্লকে কেনাফ বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি জনপ্রিয়করণ ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম হাতে নেয়। ফলে ব্লকের বাইরে প্রায় ২শ’ একর জমিতে কেনাফ চাষ করা হয়। এটি চাষ করতে তেমন কোন খরচ করতে হয় না। ডাল জাতীয় ফসলের সাথে কিংবা ফুলকপি, বাঁধাকপি কিংবা বেগুনের সাথেও সাথী ফসল হিসেবে এটি চাষ করা যায়। এজন্য নিড়ানি, আন্ত:পরিচর্চা, কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। অল্প সার দিলেই হয। গায়ে কাটা থাকায় গবাদিপশু আক্রমণ করতে পারে না। একরে উৎপাদন ১০ থেকে ১২ মণ। ৪ মাসের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা যায়। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায় থেকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কৃষক মাঠ দিবসসহ বিভিন্নভাবে কৃষকদের মাঝে কুড়িগ্রামে কেনাফ চাষের বিপুল সম্ভাবনা তুলে ধরে তাদের উদ্বুদ্ধ করছেন।
চিলমারী উপজেলার বনগ্রামের কৃষক কুদ্দুস আলী জানান, পাট চাষের চেয়েও অতি সহজে কেনাফ বীজ বা কেনাফ চাষ করা যায়। এতে খরচ অনেক কম কিন্তু লাভ অনেক বেশি। তাই এবারে তিনি ১৭.৫ একর জমিতে কেনাফ লাগিয়েছেন।
একই গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, বিশ্বাসই করতে পারি নি কেনাফ চাষ করে এতো লাভ হবে। গ্রামের কুদ্দুস ভাইয়ের লাভ দেখে এবার আমিও ৩ একর জমিতে কেনাফ চাষ করছি। আশাকরছি আমিও লাভের মুখ দেখতে পারবো।
চিলমারী উপজেলা কৃষি অফিসার কুমার প্রণয় বিশাণ দাস বলেন, অপ্রচলিত কেনাফ ফসল চাষ করে এখানকার কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছে। এটি সম্প্রসারণে কৃষকদের পাশে থাকবে কৃষি বিভাগ।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউটের জুট ফার্মিং সিস্টেমস বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাসির উদ্দিন বলেন, প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে তোষাপাটের সাথে এই অঞ্চলে কেনাফ বীজ চাষ করা হয়। দেখা গেছে এক শতকে ৬ কেজি পর্যন্ত কেনাফ বীজ উৎপাদন করা যাচ্ছে। ফলে কৃষকরা আগ্রহী হওয়ায় এটি সম্প্রসারিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক (উইং) ড. নার্গিস আক্তার বলেন, দেশী পাট ও তোষা পাটের চেয়ে কেনাফের সুবিধাটা হলো এতে কৃষকের কোন বাড়তি খরচ করতে হয়না। উর্বর বালু মাটিতেও এটি উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়াও সাথী ফসল হিসেবে বেগুন ক্ষেত, বাধাকপির সাড়িতেও কেনাফ বীজ বা কেনাফ উৎপাদন করা যায়।