।। নিউজ ডেস্ক ।।
আজ ৭ জানুয়ারি বিশ্বের আলোচিত ফেলানী হত্যা দিবস। ২০১১ সালের এই দিনে মই দিয়ে কাটাতার পার হবার সময় ভারতীয় বিএসএফ নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে বহুল আলোচিত ফেলানী খাতুনকে। তার হত্যার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও সন্তান হত্যার বিচার পায়নি তার পরিবার। প্রিয় সন্তান হত্যার বিচারের আশায় এখনো কাঁদে তার পিতা-মাতা।
জানা যায়, নাগেশ্বরীর রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের শ্রমিক নূরুল ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাঁও এলাকায়। সেখানেই তিনি একটি ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। এর মধ্যে বাংলাদেশে নিজের খালাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয় নিহত কিশোরী ফেলানী খাতুনের। সেই উদ্দেশ্যে বাবা নুরুল ইসলামের বড় মেয়ে ফেলানীকে নিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে রওনা দেয়। ২০১১ সালের এই দিনে কুয়াশা ঢাকা ভোর ৬টার দিকে দালালের মাধ্যমে ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে মই বেয়ে কাঁটাতার পার হচ্ছিল ফেলানী ও বাবা নুরুল ইসলাম। মইয়ের সামনে ছিল বাবা নুরুল ইসলাম তার পিছনে ফেলানী। এসময় বিএসএফ টের পেয়ে গুলি ছুঁড়লে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ফেলানীর বাবা নেমে পরায় বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ হয়ে কাঁটাতারে ঝুলে পরে কিশোরী ফেলানী। গুলিবিদ্ধ হয়ে ছটফট করে পানি পানি বলে চিৎকার করতে করতে নির্মমভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে ফেলানী। প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে তার মৃতদেহ।
এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পরে ভারত সেই চাপের মুখে পরে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফএর এ কোর্টে স্বাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামী অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফ’র বিশেষ কোর্ট। রায় প্রত্যাখ্যান করে পুণ:বিচারের দাবী জানায় ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পূর্ন:বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও বিএসএফ’র আদালতে। এবার শুধু স্বাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। আবারো ২০১৫ সালের ২ জুলাই ওই আদালত পুণরায় আত্মস্বীকৃত আসামী অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রীম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬অক্টোবর রিট শুনানী শুরু হয়। এরপর ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানী পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনা শুরুর আগে শুনানীর দিন ধার্য হলেও শুনানী হয়নি।
ওই এলাকার মজিরণ ও সামসুল জানান, প্রথম প্রথম লোকজন খোঁজখবর নিলেও এখন আর কেউ এই পরিবারের খোঁজখবর রাখে না। বিচার শুরুর সময় মনে হয়েছিল ন্যায় বিচার পাবে। কিন্তু যেভাবে বিচার হচ্ছে এবং সময় কাটানো হচ্ছে তাতে বোঝা যায় ফেলানী হত্যার বিচার পাবে না তার পরিবার। এছাড়াও ফেলানী হত্যার এক যুগেও বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতন।
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম জানান, আমাদের নিরস্থ সন্তানকে নির্মমভাবে কাটাতারে হত্যা করা হয়েছে। তাকে একটু পানিও খেতে দেয়া হয়নি। আমরা বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছি। কিন্তু এক যুগ পেরিয়ে গেলেও আমরা না পেলাম ক্ষতিপূরণ না পেলাম ন্যায় বিচার।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস.এম আব্রাহাম লিংকন জানান, করোনার কারণে ফেলানী খাতুন হত্যার বিচার ঝুলে থাকায় দু’রাস্ট্রের বন্ধুত্ব সম্পর্ক অটুট রাখতে দ্রুত ভারতের উচ্চ আদালত বিচারটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন এই আইনজীবী।