।। টেক ডেস্ক ।।
চীনভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটক অল্প দিনের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেকে বলছেন, সামাজিক এই যোগাযোগ মাধ্যমই প্রযুক্তি দুনিয়ার ‘নেক্সট বিগ থিং’। বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে টিকটককে গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে টিকটকে রুচিশীল কনটেন্টের অভাব, এটি তরুণদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে—এমন অপবাদও শোনা যায়। তরুণদের মধ্যেও রয়েছে টিকটক নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মাত্র ৩৯ সেকেন্ডে এমন সব কনট্যান্ট দেখানো শুরু হয়, যা কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসব কনট্যান্টে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ানোর মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেট (সিসিডিএইচ) পরিচালিত গবেষণাটি গত মাসে প্রকাশিত হয়। বিশেষজ্ঞরা গবেষণার খাতিরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার জন্য দুটি করে নতুন টিকটক আইডি খোলেন। প্রতিটি আইডির বয়স দেখানো হয় ১৩ বছর। একটি করে আইডির নাম এমন রাখা হয়, যার মাধ্যমে শরীর সম্পর্কিত আগ্রহ প্রকাশ পায়। এরপর নতুন এই আইডিগুলোতে প্রতি ৩০ মিনিটে কী ধরনের কনট্যান্ট দেখানো হচ্ছে, এর টালি করা হয়। এতে দেখা যায়, মাত্র ৩৯ সেকেন্ডেই এমন কনট্যান্ট দেখানো হচ্ছে, যা শারীরিক ছবি এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত। ২ দশমিক ৬ মিনিটের মধ্যে আত্মহত্যামূলক কনট্যান্টও দেখানো হয়। আর ৮ মিনিটের মাথায় দেখানো হয় ‘ইটিং ডিসঅর্ডার’ বা আহার ব্যাধি সংক্রান্ত কনট্যান্ট। আর এগুলো সব সুপারিশ করা হয় টিকটকের পক্ষ থেকেই। এই তিন ধরনের ভিডিও মিলিয়ে প্রতি ২০৬ সেকেন্ডে অন্তত ৩৫টি ক্ষতিকর ভিডিও দেখায় টিকটক।
প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা জানান, টিকটকের এমন ভিডিও দেখে অন্তত ছয় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে কিশোর-কিশোরীদের। এগুলো হলো আহার ব্যাধি, আত্মহত্যামূলক প্রবণতা বৃদ্ধি, নিজের ক্ষতি করা, মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাব, যৌন হয়রানি এবং ‘ফ্যাট-শেমিং’ বা কাউকে মোটা বলে উপহাস করার প্রবণতা।
আত্মহত্যামূলক প্রবণতা বৃদ্ধির বিষয়টি মানসিক স্বাস্থ্যের আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে ‘মোটিভেশনাল ফোর্স’ বা প্রেষণা শক্তি। র মধ্যে আছে মানুষের উৎসাহ, আনন্দ, আগ্রহ এবং চাহিদা। শিশু-কিশোররা যখন টিকটক বা এ জাতীয় প্ল্যাটফর্ম দেখে, সেগুলো তাদের প্রেষণা শক্তির জায়গা দখল করে। তখন তারা এখানেই বেশি সময় ব্যয় করে এবং দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থা থেকে সরে আসে। অভিভাবকরা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরাতে গেলে তাদের মধ্যে বিধ্বংসী আচরণ দেখা দেয়। এখান থেকে তৈরি হওয়া হতাশা তাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এগুলো টিকটকের নেতিবাচক প্রভাব।’
টিকটক ব্যবহারে ন্যূনতম বয়সসীমা ১৩ বছর। এমন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে বয়সসীমা আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন মোহিত কামাল। এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘এই দেশের আইনে ১৮ বছর পর্যন্ত সবাই শিশু। টিকটক বা এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে ১৮ না হোক, কমপক্ষে ১৬ বছরের ন্যূনতম বয়সসীমা থাকা উচিত। এতে তারা এসব প্ল্যাটফর্ম সচেতনভাবে ব্যবহার করতে পারবে।’
মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়াও সাইবার নিরাপত্তার দিক থেকেও টিকটক ব্যবহারে ঝুঁকি দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায় টিকটক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সরকারি ডিভাইসে টিকটক ব্যবহার বন্ধের পথে হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের ১৯টি অঙ্গরাজ্যে এবং কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে সরকারি ডিভাইসে টিকটক নিষিদ্ধ।