।। লাইফস্টাইল ডেস্ক ।।
হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটি বর্ণহীন তরল। পানির সাথে অক্সিজেনের অতিরিক্ত অণু যোগ করেই তৈরি করা হয় হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড। নানা ধরনের সংক্রমণ নাশক হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়, যা বৈজ্ঞানিকভাবে H2O2 নামে পরিচিত। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড শক্তিশালী অক্সিডাইজারের মতো দ্রব্যের সংস্পর্শে আসলে ভয়ংকর আগুন লাগতে পারে। নিরাপত্তাজনিত কারণে সব সময় হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। এটি রকেটের জ্বালানিতে প্রোপেল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
গৃহস্থলির কাজে এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ৩% ঘনত্বের হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ৩ শতাংশ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড দ্রবণ ঔষধ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তবে সামান্য ভুলের কারণে এটি হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক বিপদের কারণ।
চলুন জেনে নেই পদার্থটি কোথায় ব্যবহৃত হয়, কেন বিপজ্জনক ও এর প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে-
হাইড্রোজেন পার অক্সাইড যে ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে ব্যবহার করা হয়
➤ ব্লিচিংয়ের জন্য টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি বিশেষ করে ডাইং ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহার করা হয় ।
➤ অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে বহুল ব্যবহৃত হয় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড
➤ লেদার ইন্ডাস্ট্রিতেও এর ব্যবহার হয়।
➤ ওয়াটার ট্রিটমেন্টে ব্যবহার করা সহ বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির কাজে ব্যবহৃত হয়।
➤ এছাড়া বাথরুম পরিষ্কার, কাপড় ধোয়াসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যেও ব্যবহৃত হয় এটি।
নানা কাজে এর ব্যবহার হলেও সঠিকভাবে সঠিক তাপমাত্রায় এটি ব্যবহার না করলে বিপজ্জনক হতে পারে।
হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের সংস্পর্শে যে ক্ষতি হয়
➤ রংহীন তরল তেতো স্বাদের এই পদার্থটি গিলে ফেললে বা শ্বাসের সাথে গ্রহণ করলে বিচ্ছিন্ন ভাবে জ্বালাতন করতে পারে। আরও হতে পারে বমি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, অবশ, ফুসফুস সংকুচিত হওয়া, কম্পন, মানসিক আঘাত।
➤ স্বল্প মেয়াদী ফলাফলগুলো প্রকট হতে পারে এবং সেগুলো ভয়ঙ্কর রুপ নিতে পারে।
➤ শক্তিশালী অক্সিডাইজার অন্যান্য দ্রব্যের সংস্পর্শে আসলে আগুন লাগতে পারে।
➤ উচ্চ তাপমাত্রায় পাত্রটি তীব্র ভাবে ভেঙ্গে যেতে পারে যা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনবে।
➤ চোখে লাগলে স্বল্প মেয়াদী জ্বালাতন করতে পারে। ফলাফলগুলো ভয়ঙ্কর রুপ নিতে পারে আবার অন্ধত্বের কারণ ও হতে পারে।
প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা
নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করলে : দ্রুত বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করতে হবে। যদি প্রয়োজন হয় তবে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। বায়ু চলাচল, রক্তাচাপ এবং শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্রাম এবং উষ্ণ পরিবেশে থাকতে হবে। লক্ষণ এবং সমর্থন অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ত্বকে স্পর্শ করলে : দ্রুত দূষিত কাপড় ও জুতাগুলো খুলে ফেলতে হবে। সাবান পানি বা যেকোনো পরিষ্কারক দিয়ে ধুতে হবে (কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট)। জ্বালাতন করলে জীবাণুমুক্ত, শুষ্ক ও ঢিলেঢালা পোশাক পরাতে হবে। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চোখে লাগলে : প্রচুর পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে। কম পক্ষে ১৫-২০ মিনিট সাধারণ লবণ পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে যেতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না চোখ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে (৩০-৬০মিনিট) জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
গিলে ফেললে : পদার্থটি পাকস্থলীতে প্রবেশ করলে খেয়াল রাখতে হবে যেন কাঁপুনি না হয়। তবে তাকে ২-৪ গ্লাস পানি পান করাতে হবে যাতে রাসায়নিক পদার্থটি অধিকতর পাতলা হয়ে যায়। চাপ থেকে মুক্ত হতে গ্যাস্ট্রিক টিউব ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ সেটা অক্সিজেনে পূর্ণ থাকে। লক্ষণ এবং সমর্থন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। চিকিৎসা কর্মীকে অবশ্যই টিউবের ব্যবস্থা করতে। দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।