।। নিউজ ডেস্ক ।।
চার দিন অতিবাহিত হলেও রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কমিটি ঘোষণা হয়নি। সাধারণ সম্পাদকের পদে প্রাথীর নাম দফায় দফায় পরিবর্তন, হট্টগোল, অবরুদ্ধ, নেতাদের দরজায় লাথি, দেহরক্ষী আহত, পথরোধ, জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে অশোভন আচরণ করায় রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির ঘোষণা স্থগিত করা হয়েছে, জানান স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) রাতে জেলা পরিষদের রৌমারী উপজেলা ডাকবাংলোয় এ ঘটনা ঘটে। রাতভর নানা নাটকের পর কমিটি ঘোষণা না দিয়েই বুধবার (৩০ নভেম্বর) ভোরে পুলিশ পাহারায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা। এ ঘটনায় গোটা উপজেলায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশন ঠিকঠাক চললেও দ্বিতীয় অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৬জন ও সভাপতি পদে ১৩জনের জীবনবৃত্তান্ত জমা নিয়ে চলে সাক্ষাৎকার গ্রহণ। সাক্ষাৎকার শেষে খসড়া তালিকায় ৩/৪ জনের নাম চলে আসে। তার মধ্যে সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিনুর নাম বাদ দিয়ে নতুনমুখ রাজু আহমেদ খোকার নাম চলে আসে প্রথমে। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। এক পর্যায়ে নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে বিকল্প প্রার্থী হিসাবে যাদুরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন সবুজের নাম দেন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। সবুজের নাম ঘোষণার আগেই তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে অভিযোগ ওঠে।। তিনি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
এই অভিযোগের পর কেন্দ্রীয় নেতাদের অবরুদ্ধ রেখে মন্ত্রী জাকির হোসেন দ্বিতীয় নাম দেন আবু হানিফা নামে এক এনজিও কর্মীর। তার বিরুদ্ধে দেড় কোটি টাকার চেকের মামলার অভিযোগ পান কেন্দ্রীয় নেতারা।। খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় নেতাকর্মীরা সবাই বলেন, শাখাওয়াত হোসেন সবুজ একজন হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, আবু হানিফা এনজিও কর্মী ও চেকজালিয়াতি মামলার আসামি তাদেরকে কোনোক্রমে মেনে নেওয়া হবে না।
পরে বিকল্প হিসেবে রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রার নাম দেন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তিনিও সরকারি চাকুরিজীবী ও জালিয়াতি মামলার আসামী।
অবশেষে ফজলুল হক মনির নাম চলে আসলে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন তাকে মানতে নারাজ। দফায় দফায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা। কমিটির নাম ঘোষণা দিতে বিলম্ব হওয়ায় স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
এক পর্যায় তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং দরজায় লাথি মারলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান খানের দেহরক্ষী আহত হন। কমিটি ঘোষণা না দিয়ে যেতে পারবেন না বলে জাকির হোসেন চিৎকার করলে রাস্তা অবরোধ করে শুয়ে পড়েন সমর্থকরা।
রাত-ভর নানা নাটকীয়তা শেষে বুধবার ভোরে সিদ্ধান্তের বিষয়ে মুখ খোলেন কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান খান। বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির নাম ঘোষণা করার পূর্বমুহুর্তে জটিলতার সৃষ্টি হওয়ায় আপাতত কমিটির ঘোষণা স্থগিত করা হলো। পরবর্তীতে উর্দ্ধতন নেতাদের সাথে আলোচনা করে সিন্ধান্ত জানানো হবে। পরে বুধবার ভোরে পুলিশি পাহারায় কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের সাথে অশোভন আচরণ করার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব মো. জাফর আলী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মো. সাখাওয়াত হোসেন শফিক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুসহ জেলা আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, অবস্থার পারিপার্শ্বিকতা ও প্রতিকূলতার কারণে কমিটি ঘোষণা স্থগিত করা হয়েছে।