।। নিউজ ডেস্ক ।।
পত্রিকা বিক্রেতা ভুট্টো এক সময় কাঠফাটা রোদ, গরম ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে উচ্চ কন্ঠস্বরে পত্রিকার আকর্ষণীয় শিরোনাম বলে গ্রাহকদের কাছে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা পৌছে দিতো। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে পত্রিকার কদর কমে যায়। যার কারণে পত্রিকা বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চালাতে তাকে হিমসিম খেতে হয় । বাধ্য হয়ে এ পেশা ছেড়ে দেন তিনি।
সংসারের ঘানি টানতে এখন তিনি ফুটপাতের ভাপা পিঠা বিক্রেতা। তাঁর আপন চাচা পায়ে হেঁটে ২২ দেশ ভ্রমনকারি ওসমান গনি শখ করে নাম রেখেছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। বাবা-মায়ের রাখা নাম আবু মুত্তালিব। তাকে সবাই চিনে ভুট্টো নামে। ভুট্টোর বর্তমান বাড়ি উলিপুর পৌরসভার নারিকেল বাড়ি। জন্মস্থান চিলমারীর বৈলমনদিয়ার খাতা গ্রামে। পিতা-মাতার ৬ সন্তানের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ ভুট্টো।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাক সেনারা তাদের পৈত্রিক বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। পরে পিতার হাত ধরেই উলিপুরে আসেন। এরপর ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে হারাতে হয় শেষ আশ্রয়টুকু।
যৌবনের সিড়িতে পা দিয়ে পিতা-মাতার মতেই বিয়ে করেন ভুট্টো। এরপর তিন সন্তানের জনক হন তিনি। দীর্ঘ ৬০ বছরের জীবনে কর্ম হিসেবে শুরু করেছিলেন বাইসাইকেলের মেকারি দিয়ে। খুব বেশিদিন সে পেশায় টিকে থাকতে পারেননি। এরপর চায়ের দোকানে মেসিয়ার, মাইক, ভিসিআর অপারেটর হিসেবে কাজ করে সংসার চালান।
যুগের চাহিদায় প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করেছেন কর্ম আর কর্মক্ষেত্র। রমজান মাস আসলে মুসলিমদের ভোরের পাখি হিসেবে নিজেকে বিলিয়ে দেন। মধ্যরাত থেকে তার মোটা গলার আওয়াজে জেগে যায় প্রিয় রোজাদার ভাই-বোনেরা। পুরো মাস শেষে বাড়ি বাড়ি ঘুরে মুষ্টির চাল অথবা টাকা তুলে চলে যায় কিছুদিন। বর্ষার মৌসুমে পুকুর মালিকের সাথে চুক্তি করে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করেও সংসার চালান অদম্য এই মানুষটি। ৯০’র দশকে শুরু করেন পত্রিকা বিক্রি। এ পেশায় জীবনের ১৫ বছর চলে যায়। প্রযুক্তির উত্থানে পত্রিকা পড়ার মানুষের সংকট বাড়তে থাকে এবং বিক্রিতে ভাটা পড়ে। ওই সময় উলিপুরে স্থানীয় এক নেতার বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ হয় পত্রিকায়। ভুট্টো সেই খবরের শিরোনাম ধরে পত্রিকা বিক্রির সময় ওই নেতার লোকজনের রোষানলে পরে নির্যাতনের শিকারও হন। আস্তে আস্তে থেমে যায় পত্রিকা বিক্রি, বদলাতে থাকে কর্ম আর কর্মক্ষেত্র। কখনো রাজমিস্ত্রির যোগালি দিয়েও পরিবার চালিয়েছেন। চেষ্টা করেছেন নিজ সন্তানদের সুশিক্ষিত করার। ইতোমধ্যে তার বড় সন্তান ডিগ্রি পাশ করে চট্রগ্রামের একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, আরেক মেয়ে ২০২২ সালে এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছে।
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) রাত ১০টা ফুটপাতে দেখা হয় ভুট্টোর সাথে তখন তিনি জানান, পত্রিকা বিক্রির দিনগুলোতেই বেস ভালোই ছিলাম, পত্রিকার বাজারে ধস নামায় আমি এখন পথে বসেই ভাপা পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। বর্তমান পেশায় কতদিন টিকে থাকতে পারবে তাও জানা নেই ভুট্টোর।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/নভেম্বর/২৬/২২