।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে ফসলি জমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপনের কাজ চলছে পুরোদমে। ফসলি জমি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে ইটভাটার কাজ বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছে। ঘটনাটি কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কের খামার তবকপুর তেলীপাড়া এলাকায়। কিন্তু প্রভাবশালীরা ইটভাটা নির্মাণে জড়িত থাকায় তা বন্ধের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ফসলি জমির উপর ইটভাটা নির্মাণের জন্য অনেক পুরানো ইট ও বালু ফেলা হয়েছে। চিমনি নির্মাণের কাজ করছে শ্রমিকরা। প্রায় ১৫বিঘা জমি জুড়ে ইটভাটার কাজ শুরু করা হয়েছে। পাশেই আবাদ হচ্ছে আমন ধান। আরও জমি লীজ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। গ্রামবাসীরা জানান, তবকপুর ইউনিয়নের খামার তবকপুর তেলীপাড়া, সোনারী পাড়া, দফাদারপাড়া, মুসল্লীপাড়া ও পাইকপাড়া, হামীর বাজার ও নিরাশির পাথার এলাকার ৫ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ ফসল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এসব জমিতে আমন ও বোরো ধান উৎপাদন হয়। ইটভাটা নির্মাণ হলে এ এলাকায় ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ ঘটবে ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। এলাকার কৃষিতেও বিপর্যয় নেমে আসবে। এজন্য গ্রামবাসী বিভিন্ন জায়গায় ধরণা দিয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই তারা ইট ভাটা নির্মাণ বন্ধ করতে পারছেনা।
অভিযোগকারী খামার তবকপুর তেলী পাড়া গ্রামের নাজমুল হক বলেন, প্রতি বছর এই এলাকায় নতুন নতুন ভাটা স্থাপন করা হচ্ছে। এরা প্রভাবশালী হওয়ায প্রতিবাদ করলে উল্টো বিপদে পড়তে হয়। আইন অনুযায়ী কৃষি জমি, আবাসিক এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে, সরকারি বা ব্যক্তিগত বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলা ভূমিতে ইট ভাটা নির্মণ করা যাবেনা। কিন্তু ইট ভাটা স্থাপন ও পরিচালনায় সরকারি নির্দেশনা মানছেন না বেশির ভাগ ইটভাটার মালিক।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উলিপুরে বিভিন্ন স্থানে ৩০ টি ইট ভাটা রয়েছে। এরমধ্যে ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৫ টির। বন্ধ রযেছে ১০ টি। বাকি গুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ইট তৈরীর কাজ চলছে। নিরাশির পাথার জলা ভূমিতে এমএসবি, এইচবিইউ ও এমএনবি নামের ৩ টি ইট ভাটা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে (কালুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয ও শান্তিপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) ডিএসবি ও একেএম নামের ২টি ইট ভাটা রয়েছে।
ডিএসবি ইটভাটার মালিক দেলওয়ার হোসন জানান, লাইসেন্স এর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। ভাটায় কাঠ পেড়ানো হয় কিনা এমন প্র্রশ্নর জবাবে তিনি বলেন, চুল্লী জ্বালানোর সময সব ভাটাতে কাট পোড়ানো হয়।
ফসলী জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করছেন তবকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদার রহমান বকুল। তিনি বলেন ১০/১২ জন কৃষকের জমি লীজ নিয়ে ইট ভাটা তৈরি করা হচ্ছে। লীজকৃত জমির কৃষকদের বোরো ও আমন মৌসুম মিলে প্রতি একরে ১২৬ মণ ধান বা সম পরিমান মূল্য পরিশোধের নিমিত্তে জমি লীজ নেওয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগ না থাকলেও একটি মহল ইটভাটা নির্মাণে প্রতিব্ধকতার সৃষ্টি করছে। ইটভাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন গ্রীন ভয়েসের কুড়িগ্রাম জেলা সভাপতি রাইসুল ইসলাম নোমান বলেন, ভাটার ধোঁয়া থেকে কার্বন নিসরণ হওয়ায় তা পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। ভাটা এলাকার শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাস কষ্টে ভুগে থাকে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম জানান, ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের খবর পেয়ে উলিপুর প্রশাসনের প্রশাসনের সহযোগিতায় ওই ভাটায় অভিযান পরিচালনা করে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাদের ছাড়পত্র বা লাইসেন্স নাই তাদের ভাটায় দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোভন রাংসা অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ওই ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ইতিমধ্যে অভিযান পরিচালনা করেছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হযেছে।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/নভেম্বর/১৫/২২