।। নিউজ ডেস্ক ।।
উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ছোট বড় ১৬টি নদ-নদী অববাহিকার প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক চরাঞ্চলের মানুষজন প্রতিবছর বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের ফলে ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়। ফলে কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো মুখোমুখি হয় চরম সংকটের। এসব পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ।
১৬টি নদ-নদী এলাকায় বন্যা ও নদী ভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার পরিবারগুলো যখন দিশেহারা তখন ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ তাদের সহায়তার পাশাপাশি পারিবারিকভাবে আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ড বাড়াতে এগিয়ে এসেছে। জেলার চিলমারী, রৌমারী ও সদর উপজেলায় ২৫টি চরের ৭৫০টি দরিদ্র পরিবারকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করছে। এতে পরিবারগুলো ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। সেই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে তাদের জীবনমান। এই পরিবারগুলোকে উন্নয়নমুখী হতে বিভিন্ন বিষয়ে আত্মনির্ভরশীল ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে পরিবারগুলোকে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে শাকসবজির বীজ দেয়া হয় এবং স্বাবলম্বী করতে চরে উপযোগী ভেড়া বিতরণ করা হয়। পরিবারগুলোর বন্ধন অটুট রাখার জন্য পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইনগত বিষয় নিয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ধরলা নদীর অববাহিকায় পাঙ্গারচর গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, এই গ্রামের ৩০টি বন্যা কবলিত পরিবার পারিবারিক আয়বৃদ্ধিমুলক কর্মকান্ড ছাড়াও সামাজিক উন্নয়নমুলক কাজে যুক্ত হয়েছেন। এ গ্রামের সাহাদ আলী ও মফিজুল ইসলাম জানান, আমাদের গ্রামে প্রবেশ করার রাস্তাটি বন্যায় ভেঙে গেলে ফ্রেন্ডশিপের সহায়তায় মেরামত করেছি। রিক্সা ও অটোরিক্সায় স্কুল-কলেজ যাতায়াত ও আমাদের উৎপাদিত শাক-সবজি সহজেই হাট-বাজারে বিক্রি করতে পারি।
একই গ্রামের হাসিনা বেগম, আঞ্জুমান আরা, খোদেজাসহ অনেক নারী জানান, সুশাসন বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়ে তারা সচেতন হয়েছেন। পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, তালাকপ্রাপ্ত, বহুবিবাহ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সংবিধান, সংসদ সম্পর্কে জানতে পেয়েছি। ফ্রেন্ডশিপের মাধ্যমে বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ প্রদান পান তারা। জৈব সার তৈরি ও ব্যবহার, ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে পোকা মারা, সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় তথ্য তারা জানতে পেরেছেন।
আঞ্জুমান আরা বেগম জানান, প্রকল্প থেকে আমাকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে একটি ভেড়া দিয়েছে যার বর্তমান ৩টি বাচ্চা হয়েছে। সব মিলে এদের বাজারমূল্য ২৮হাজার টাকা। আধুনিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ পেয়ে সবজি উৎপাদন করেন। সাংসারিক ব্যয় বহন করে কিছু টাকা সঞ্চয় করেছেন। এছাড়াও ৫হাজার টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনে উন্নতি লাভ করি। বর্তমানে তার স্বামীর একার আয়ের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না।
ফ্রেন্ডশিপ এর ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রকল্পের প্রকল্প ম্যানেজার কৃষিবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, আমরা ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ এর সহায়তায় সদস্যদের আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে জেলার কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী এ ৩ উপজেলার মোট ২৫টি চরে ৭৫০ জন সদস্যকে প্রকল্প সহায়তা প্রদান করে আসছি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, কুড়িগ্রামের ৩ উপজেলায় ফ্রেন্ডশীপ ৭৫০টি পরিবারকে ভেড়া প্রদান করে এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। একারণে পরিবারগুলোর ভেড়া পালন করে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো:রাসেদুল হাসান জানান, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর চরে বসবাসরত এসব পরিবারকে ফ্রেন্ডশীপ ভেড়াসহ নানা সহায়তা করছে যা তাদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।