।। নিউজ ডেস্ক ।।
নতুন যন্ত্রের আগমনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গরুর হাল। কুড়িগ্রামের উপজেলাগুলোর চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় আগের মত এখন আর লাঙ্গল দিয়ে গরু টানা হাল চাষ দেখা যায় না। আধুনিকতার যুগে হাল চাষের পরিবর্তে এখন ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করা হয়।
এক সময় উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে কৃষকরা গরু পালন করতেন ফসলি জমি চাষ করার জন্য। আবার কিছু মানুষ গবাদি পশু দিয়ে হাল চাষকে পেশা হিসাবেও নিত। নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হাল চাষ করে তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করত। হালের গরু দিয়ে দরিদ্র মানুষ জমি চাষ করে ফিরে পেত তাদের পরিবারের স্বচ্ছলতা।
আগে দেখা যেত কাক ডাকা ভোরে কৃষক গরু, লাঙ্গল-জোয়াল নিয়ে মাঠে বেরিয়ে পড়তেন। এখন আর চোঁখে পড়ে না গরুর লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষাবাদ। জমি চাষের প্রয়োজন হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে চলছে চাষাবাদ। তাই কৃষকরা এখন হাল চাষ ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুকছেন। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর হাল।
গরু দিয়ে হাল চাষ করতে আসা চরাঞ্চলের কৃষক বলেন, ছোটবেলা হাল চাষের কাজ করতাম। বাড়িতে হাল চাষের বলদ গরু ছিল ২/৩ জোড়া। চাষের জন্য দরকার হতো ১ জোড়া বলদ, কাঠ লোহার তৈরি লাঙ্গল, জোয়াল, মই, লরি (বাশের তৈরি গরু তাড়ানোর লাঠি), গরুর মুখে টোনা ইত্যাদি। আগে গরু দিয়ে হাল চাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো। অনেক সময় গরুর গোবর জমিতে পড়ত, এতে করে জমিতে অনেক জৈব সার হতো ক্ষেতে ফলন ভালো হত। এখন নতুন নতুন মেশিন অ্যাইছে, মেশিন দিয়ে এখানকার লোকজন চাষাবাদ করে। মোগো তো ট্যাকা নাই মেশিন কিনে জমি চাষ করার, তাই এহন সংসার চালাইতে অনেক কষ্ট হইতেছে।
মাছাবান্দা এলাকার কৃষক জানান, গরুর লাঙ্গল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪৪শতাংশ জমি চাষ করা সম্ভব। আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরুর লাঙ্গলের চাষ গভীর হয়। জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও ফসলের চাষাবাদ করতে সার কীটনাশক সাশ্রয় পায়। তাই কষ্ট হলেও এখনো অনেকেই গরুর লাঙ্গল দ্বারা চাষাবাদ করে।
তিনি আরও জানান, কালের আবর্তনে হয়তো এক সময় হাল চাষের অস্তিত্ব থাকবে না। তখন হয়তো এটি দেখার জন্য যেতে হবে যাদুঘরে।