।। নিউজ ডেস্ক ।।
কাক ডাকা ভোর হতেই শোনা যায় সুরেলা বাঁশির ধ্বনি। এক হাতে লাঠি আর অন্য হাতে বাঁশি, কাঁধে একটি কাপড়ের ব্যাগ, বেড়িয়ে পড়ে পরিবারের আহার জোটাতে। বাঁশি বাজিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে যা পায়, তা দিয়েই কোন রকমে ৪ সদস্যের সংসার চলে। এভাবেই প্রায় ৩ যুগ কাটছে দৃষ্টি হারানো নিতাই চন্দ্র শীল ওরফে আলসিয়া (৪৫) এর। জীবনের এতটা সময় পেরিয়ে গেলেও এখন অনেকটাই ক্লান্ত সে। বাঁশি বাজিয়ে সারাদিন যা জোটে, তা দিয়ে পরিবারের সদস্যের দু’বেলা দু’মুঠো আহারই যেন জোটেনা। তার দুই ছেলে। স্বপ্ন ছিল ছেলেদের লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার। কিন্তু সে আশা গুড়ে বালি।
শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে উলিপুর বাজারের পাট হাটিতে এক কাচামাল ব্যবসায়ীর দোকানের সামনে বাঁশি বাজাচ্ছেন। লোকজন জটলা পাকিয়ে শুনছেন শুরেলা কন্ঠের বাঁশি বাজানো। এগিয়ে গিয়ে কথা হলো, ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের কেকতির পাড় গ্রামের বিষ্ঠরাম চন্দ্র শীলের অন্ধ ছেলে নিতাই চন্দ্র ওরফে আলসিয়ার সাথে। কিছুক্ষনের মধ্যে জটলা ভেঙ্গে একে একে ২/৫ টাকা দিয়ে চলে গেল সবাই। জিজ্ঞাসা করতে সে জানায়, ৬ বছর বয়সে চোখের অসুখ হলে গ্রাম্য কবিরাজের পরামর্শে গাছ-গাছরার রসসহ লবন পানি দেয়া হয় চোখে। তারপর আর চোখে দেখতে পায়নি সে। হতদরিদ্র বাবার চিকিৎসা করার সার্মথ্য না থাকায় অন্ধত্ব নিয়ে বাকি জীবন পাড়ি দিতে হচ্ছে তাকে। প্রতিবেশীদের আর্থিক সহযোগীতায় বাড়িতে মুদি দোকান দিয়ে বসলেও অভাব-অনটনে তাও বন্ধ হয়ে যায়। আর এ দোকানে বসেই বাঁশি বাজানো শেখে সে। আজ বাঁশিই তার জীবনের একমাত্র সম্বল। এরপর বিয়ে করেন। জন্ম নেয় দুই ছেলে শংকর চন্দ্র শীল (১৬) ও সমাপ্ত চন্দ্র শীল (১১)। বাবার বাড়ি-ভিটার এক শতাংশ জমি পেয়েছে। এতে কোন রকমে একটা ঘর তুলে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তার দাবি একটি সরকারি ঘরের। বড় ছেলে শংকর চন্দ্র শীল ৩বছর আগে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা-পড়া করে অভাব অনটনের কারণে বাদ দেন। এরপর সংসারে সহযোগিতা করার জন্য শুরু করেন নরসুন্দরের কাজ। ছোট ছেলে সমাপ্ত চন্দ্র শীল ৫ম শ্রেণিতে পড়ছে। কিন্তু সারাদিনের আয় দিয়ে যেখানে সংসারই চলে না সেখানে ছেলের লেখাপড়া অনেকটাই অনিশ্চিত।
আলসিয়া বলেন, আমি অন্ধ হলেও ভিক্ষে চাই না কারো কাছে। বাঁশি বাজানো শুনেই মানুষ আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করে। পুঁজি থাকলে আবার ব্যবসা করে ছোট ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করতে চাই।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/অক্টোবর/২৯/২২