।। নিউজ ডেস্ক ।।
দেশের উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রাম জেলা দারিদ্রতার শীর্ষে থাকার তকমা কিছুতেই মুছতে পারছে না। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার, গঙ্গাধর ও ধরলাসহ ১৬টি নদ-নদী জালের মতো ছড়িয়ে আছে জেলা জুড়ে। এসব নদ-নদী অববাহিকায় অবস্থিত চরাঞ্চলগুলোতে মৌসুমি কাজের সংকটে দিনাতিপাত করছেন দিনমজুররা। ফলে কাজের সন্ধানে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষজন।
অন্যদিকে স্বাভাবিক নিয়মে নভেম্বরের মাঝামাঝি আমন ধান কাটা শুরু না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে কৃষি শ্রমিকদের কাজের সংকট। অল্প সংখ্যক কৃষক আগাম জাতের ধান কাটা শুরু করলেও অনেক কৃষি দিনমজুর কাজের খোঁজে যাচ্ছেন দেশের নানা এলাকায়।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী এলাকার দিনমজুর আইনুল হক (৫২) বলেন, ”হামার এত্যি এ্যালাও ধান কাটা কাম শুরু হয় নাই, অন্য কামও নাই। পোত্তেকদিন কামলা বেচার জন্যে টাউনোত আসি ভিড় করি, কিন্তু টাউনোতো কাম জুটপ্যার নাগছে না। কাম না পায়া ম্যালা কামলা ঘুরি বাড়িত চলি যায়।”
মোগলবাসা ইউনিয়নে ধরলা নদী অববাহিকার চর সিতাইঝার গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি ধান কাটা শুরু হবে। তাই মৌসুমি কর্মসংকটের সময় আমাদের কৃষি শ্রমিকের হাতে কাজ নেই। আমরা কৃষিকাজ করে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা মজুরি পাই। এখন কাজ না থাকায় আমার শ্রম স্থানীয় বেগুনচাষীর কাছে কম দামে বিক্রি করেছি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর এলাকার শ্রমিক আবুল কাশেম, নেওয়াজ মিয়া, খয়বর আলীসহ কয়েকজন দিনমজুর কুড়িগ্রাম বাসটার্মিনালের পাশে দূর দূরান্তের জেলাগুলোতে কাজের সন্ধানে যাবার জন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কথা হলে তারা জানান, এই মাসের প্রথম দিকে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়ি। প্রতিদিন বাড়ি থেকে কাজের সন্ধানে বের হচ্ছি। কাজ পাচ্ছি না। তাই কাজের সন্ধানে অন্য জেলাগুলোতে যাচ্ছি।
এবারে বন্যার কারণে দেরিতে ধান রোপণ করায় এই এলাকায় ধান কাটাও শুরু হবে দেরিতে। তাই কৃষি শ্রমিকরা মৌসুমি কর্ম সংকটে পরে। আর এই সংকটের কারণে অনেকেই দিনাজপুর, বগুড়া, শেরপুর, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ধান কাটার জন্য যাচ্ছে। বাইরের ধান কাটা শেষে এলাকায় এসে অনেকেই আবার ধান কাটার কাজ শুরু করবেন।
জেলা প্রসাসন সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে ভারি কোন শিল্প কলকারখানা নেই। এখানে শিল্প কারখানা বলতে স্পিনিং মিল ১টি, জুট মিল ১টি, টেক্সটাইল মিল ১টি, কুটির শিল্প ৮০৪০টি, ক্ষুদ্র শিল্প ৩৪৩টি। কিন্তু স্পিনিং মিল, জুট মিল ও টেক্সটাইল মিল দীর্ঘদিন ধরে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে।
ছোটবড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, হোটেল রেস্তরাঁ, বিভিন্ন দোকান, কৃষি খামার মিলে হাতে গোনা কিছু মানুষের কাজ জুটলেও বিশাল একটি অংশ দিনমজুর কর্মহীন থাকে। এরা এলাকায় কাজ না পেয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করে জীবন চালায়। এরই একটি অংশ মূলত: মৌসুমী কাজে জড়িত থাকে। কিন্তু এবার মৌসুমী কাজের সংকটে তারাও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজের সন্ধানে ছুটছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. আজিজুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামে বন্যার কারণে চর ও নিম্নঞ্চলগুলোতে আমন ধান রোপন হয় দেরিতে। সে কারণে এই সময় শ্রমিকদের হাতে কাজ থাকে না। জেলায় কৃষি শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ২ লাখের বেশি । এরা অন্যান্য কাজেও শ্রম দিতে অভ্যস্ত। তবে বেশিরভাগই কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। নভেম্বর মাসে আমন মৌসুমের ধান কাটামারাই আরম্ভ হলে জেলার কৃষি শ্রমিকদের চলমান মৌসুমি কাজের সংকট দূর হবে।