।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা, ধরলাসহ ১৬টি নদ-নদীগুলোর অববাহিকার চরগুলোতে জন্মায় প্রচুর ঘাস। চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ চারণভূমিতে জন্মানো সবুজ লতাপাতা আর সবুজ ঘাস সহজেই খাদ্য হিসেবে পাওয়ায় অল্প পুঁজিতে মহিষ পালন করে নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাচ্ছে এখানকার চাষী ও খামারিরা। লাভজনক হওয়ায় এসব অঞ্চলে বৃদ্ধি পাচ্ছে মহিষ পালন ।
জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার কুড়িগ্রাম সদর, রৌমারী, রাজিবপুর, উলিপুর, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, রাজারহাট, ভূরুঙ্গামারী, চিলমারীসহ মোট ৯ উপজেলার প্রায় ৪শতাধিক চরাঞ্চলে ৯ হাজার ৫শ ২৭টিরও বেশি মহিষ পালন হচ্ছে। নদ-নদী অববাহিকার এসব চরের চারণভূমিতে জন্মানো সবুজ ঘাস খেয়ে চড়ে বেড়ানো এবং নদের পানিতে নেমে সাঁতার কাটা মহিষগুলোর স্বাস্থ্যও চমৎকার। চরে জন্মানো ঘাস-পাতা এদের মূল খাদ্য হওয়ায় খরচও কম হয় চাষিদের। মহিষ পালনে তেমন যত্ন না নিলেও প্রাকৃতিকভাবেই এরা বেড়ে ওঠে। চরের মহিষের দুধের চাহিদা অনেকটা বেশি থাকায় লাভবান হচ্ছে পালনকারীরা। অনেকে বাড়িতে নিজেরাই দুধ থেকে দই, মিষ্টি, ঘিসহ মুখরোচক খাবার তৈরি করে হাটে নিয়ে বিক্রি করে পরিবারের চাহিদা মেটাচ্ছেন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর যাত্রাপুর গ্রামের মজিবর মোল্লা বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে চরাঞ্চলে মহিষ পালন করা হয়। আগে অনেক বেশি পরিমাণে মহিষ পালন হতো। তার নিজের ৪টি মহিষ আছে। তেমন কোনো খরচ না করেই অনেক দুধ পাওয়া যায় বেশি। এছাড়া মহিষের মাংস সুস্বাদু হওয়ায় এ অঞ্চলে এর যতেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ক’দিন আগে ২টি মহিষ বিক্রি করে পরিবারের অর্থের চাহিদা মিটিয়েছেন।
রৌমারী উপজেলার খেরুয়ার চরের মহিষের রাখাল ফুলচান বলেন, চরের প্রায় প্রত্যেক কৃষকের তিন থেকে চারটা মহিষ আছে। মহিষ পালনে তেমন যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। চরে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ঘাস, লতা-পাতা খাদ্য চাহিদা পূরণ করে। প্রাকৃতিকভাবেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে এরা বেড়ে ওঠে। বেশি গরমে মহিষ নিজে থেকে পানিতে নেমে মুখ উঁচু করে শরীর ডুবিয়ে রাখে।
রৌমারী উপজেলার বন্দবের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে মহিষ পালনের ইতিহাস অনেকদিনের। এক সময় খেরুয়ার চর, বড় চর, ফেইচকার চরসহ বিভিন্ন চরের গৃহস্থদের শত শত মহিষ ছিল। তখনকার দিনে এ অঞ্চলে মৈষাল দুধে তৈরি দই, মিষ্টির সুখ্যাতি ছিল। এখন আবার মানুষজন মহিষ পালনে আগ্রহী হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. মো: ইউনুছ আলী বলেন, চরাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশে লাভজনক হওয়ায় প্রায় প্রত্যেক কৃষক মহিষ পালন করেন। মহিষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় রোগ-বালাই কম হয়। তাছাড়া চরাঞ্চলসহ গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে চাহিদা বেশি থাকায় প্রায় সারা বছরই মহিষের মাংস ও দুধের মূল্য বেশি থাকে। তাই আমরা চরাঞ্চলে মহিষ পালনে মানুষজনকে উদ্বুদ্ধ করে থাকি।