।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে তিস্তা নদীগর্ভে সাতালস্কর সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়। এক মাস বন্ধ থাকার পর একটি পরিত্যাক্ত বাড়ির আঙ্গিনায় খোলা আকাশের নীচে কোন রকমে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। তিন ক্লাসের শিক্ষার্থীদের একখানে গাদাগাদি করে বসিয়ে নেয়া হচ্ছে ক্লাস ও পরীক্ষা। ঝঁড় বৃষ্টি হলেই বিনা নোটিশে বন্ধ থাকে ক্লাস।
উলিপুর সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দুরে বজরা ইউনিয়নের সাতালস্কর সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়। তিস্তা নদীর চলতি ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায় বিদ্যালয়টি। এ নিয়ে তিনবার ভাঙনের শিকার হয় বিদ্যালয়টি। নুতন করে বিদ্যালয় নির্মাণ করার জন্য সরকারী ভাবে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেলে জমি না থাকায় ঘর করতে পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বন্যা ও ভাঙনের কারণে এক মাস বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকার পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই মিলন ও রতনের পরিত্যাক্ত বাড়ির আঙ্গিনায় অস্থায়ী ভাবে বিদ্যালয় চালানোর জন্য ব্যবস্থা করেছেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শিশু শ্রেণিসহ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক সাথে এবং ১২ টা থেকে ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক সাথে বসিয়ে পাঠদান করানো হয়। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির কার্যক্রম ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে চলছে। বিদ্যালয়টির ৫জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ২০১৫ সালে অবসরে যাওয়ার পর থেকে ৪ জন সহকারী শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান। বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩০ জন। ২০১৫ সালে প্রধান শিক্ষক মোকলেছুর রহমান অবসরে গেলে সিনিয়র শিক্ষক আবুল কালাম আজাদকে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা হয়। কর্মরত অন্যান্য শিক্ষকরা হলেন, নাজমুল হুসাইন, আনোয়ারা খাতুন ও দোলনা রানী রায়।
সরেজমিনে তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়া উত্তর সন্তোষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বকলাকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৭টি ভেঙ্গে যাওয়া বিদ্য্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারেনি। ফলে বিদ্যালয় এভাবে চলছে। ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিকা খাতুন জানায়, এভাবে কি লেখা পড়া করা যায়। ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান জানায়, আমার মা বাপ স্কুলে আসতে দিতে চায় না। তবু জোড় করে আসি। বাড়িত থাকবার মোনায় না।
অভিভাবক আনোয়ার হোসেন জানায়, ঘর দরজা নাই, পরিবেশ নাই, ছাওয়া গুলা (বাচ্চা গুলো) রোদ আর গরমে কাহিল (ক্লান্ত) হয়া যায়। তাই ছেলের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিছি।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, এই পরিবেশে শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না। তবু যারা আসছে তাদের লেখা পড়ার যেন ক্ষতি না হয় সে জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘর করার অর্থ বরাদ্দ পেয়েছি, জমি দাতা পেলে সেখানে ঘর করা হবে।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নুরভানু বেগম জানান, টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেলেও জমি না পাওয়ায় ঘর করা সম্ভব হচ্ছে না। জমির দাম বেশী হওয়ায় এখন আর দাতা পাওয়া যায় না। তাই প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে বিপদে পড়েছি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাদিরুজ্জামান জানান, গত বছর বিদ্যালয়টি নদীতে বিলিন হলে নতুন ঘর করার জন্য টাকা বরাদ্দ আসে। কিন্ত ঘর নির্মাণ করার আগেই আবার ভেঙে যায়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জমি খুঁজছে জমি পাওয়া সাপেক্ষে ঘর নির্মাণের উদ্দ্যোগ নেয়া হবে।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/অক্টোবর/১৭/২২