।। নিউজ ডেস্ক ।।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর আওতাধীন “অবকাঠামোগত দক্ষতা উন্নয়ন ও তথ্যের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা বৃদ্ধি (প্রভাতী)” শীর্ষক প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকার এবং দাতা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভলপমেন্ট (ইফাদ) সহায়তাপুষ্ট যা বাংলাদেশের চরম দারিদ্রতা হ্রাস করার একটি গভীর প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। জলবায়ু পরিবর্তনশীলতা ও পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে প্রকল্প এলাকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, বিশেষত চর বাসিন্দা, দরিদ্র এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উৎপাদক শ্রেণী বিপুল প্রতিকূলতার সম্মুখীণ হয়। দেশের মধ্য-উত্তরাঞ্চলে মৌসুমী বন্যা, নদীভাঙ্গন এবং তুলনামূলকভাবে রাস্তা-ঘাট কম হওয়ায় কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণে সমস্যা হয় এবং কৃষক পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে এ অঞ্চলে দারিদ্রের হার বেশি। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে দেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলের ৬টি জেলার ২৫টি উপজেলায় ইফাদ এর আর্থিক সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলার ৯ টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে যেখানে ১০৫.৪৯ কি.মি. গ্রামীন সড়ক উন্নয়ন, চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক দল (এলসিএস) এর মাধ্যমে ১০৫.৪৬ কি.মি গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক দল (এলসিএস) কর্তৃক গ্রামীণ হাট বাজার উন্নয়ন, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রামীণ হাট বাজারে মহিলা মার্কেট সেকশন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় সড়ক ও বাজার উন্নয়নে অন্তর্ভুক্ত এলসিএস সদস্যদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ, যুবক-যুবতী দের নিয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং জেন্ডার অ্যাকশন লার্নিং সিস্টেম (GALS) কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
স্থানীয় চাহিদা এবং সরকারী খাস জমির সহজলভ্যতার উপর ভিত্তি করে হাট-বাজার উন্নয়নের জন্য কিছু অথবা সকল অংশ অন্তর্ভূক্ত করা হবে, তবে প্রকৃত প্রয়োজন কিংবা বাজেটের উপর নির্ভর করে উন্নয়ন ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। গ্রামীণ হাট-বাজার সমূহে প্রয়োজন অনুযায়ী মাছের শেড, বহুমুখী শেড, সামান্য উচু উন্মুক্ত বিক্রয় প্ল্যাটফর্ম, সাধারন টয়লেট (পুরুষ ও মহিলা), টিউবওয়েল স্থাপন, আভ্যন্তরীন রোড উন্নয়ন, মহিলা মার্কেট সেকশন, ডাস্টবিন, এমএমসি অফিস এবং বৈদ্যুতিক সড়ক বাতি এর উন্নয়ন কাজ করা হয়। বাজার নির্মাণ কাজ শেষ হলে ‘প্রভাতী’ প্রকল্পের পক্ষে উপজেলা প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে একটি সমঝোতা স্মারক সম্পন্ন করে বাজার হস্তান্তর করা হবে।
কুড়িগ্রাম জেলায় পাঁচটি হাটের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে ভুরুঙ্গামারীর বলদিয়া হাট, ফুলবাড়ীর ঘঘুরহাট ও শিবের হাট, নাগেশ্বরীর ছিলাখানা হাট এবং উলিপুরের হাতিয়া ভবেশ হাট হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ভুরুঙ্গামারীর মুক্তিযোদ্ধা হাট ও চৌধুরী হাট, নাগেশ্বরীর স্কুলের হাট, চিলমারীর জোড়গাছ হাট, কুড়িগ্রাম সদরের যতীনের হাট, রাজারহাটের চওড়া হাট, রৌমারীর সায়দাবাদ হাট গুলির নির্মাণ কাজ পর্যায়ক্রমে ডিসেম্বরের ২০২২ ইং এর মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা যায়। প্রভাতী প্রকল্পের নির্ধারিত সকল নীতিমালা অনুসরণ করে ১২টি হাট-বাজারের উন্নয়ন কার্যক্রমে ৪৯৮ জন এলসিএস সদস্য (মহিলা ৩৫১ জন এবং পুরুষ ১৪৭ জন) নিয়োজিত আছে।
গ্রামীণ হাট-বাজার সমূহ গ্রামীণ অর্থনীতি ও বণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। হাট-বাজার উন্নয়নের পাশাপাশি বাজারের চতুষ্পার্শ্বস্থ অবকাঠামো উন্নয়ন গ্রামীণ অর্থনীতিতে আনে গতিশীলতা এবং সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে করে উদ্ধীপ্ত। গ্রামীণ এই হাটবাজার গুলির উন্নয়ন হলে কৃষি এবং অকৃষি পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। সাথে সাথে পণ্যগুলির বর্ধিত বিপণন সম্পন্ন হবে। বেকার যুবক-যুবতীগণ ক্ষুদ্র এবং মাঝারী ব্যবসা বানিজ্যে তাদের সম্পৃক্ত করার সুযোগ পাবে। ফলে দরিদ্র ও বেকার যুবক ও যুবমহিলাগণের জন্য আশানুরূপ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।
প্রভাতী প্রকল্প হাট বাজার উন্নয়নের মাধ্যমে যে দীর্ঘমেয়াদী আর্থ-সামাজিক সুব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহন করেছে তা ত্বরান্বিত করতে নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডি, কুড়িগ্রাম কাজের গুণগত মান বজায় রাখতে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করে থাকেন এবং এলসিএস সদস্যদের খোঁজখবর নেন। ফলে এলসিএস সদস্যদের প্রাথমিকভাবে যেমন কর্মদক্ষতা ও দৈনিক আয়ের উৎসের একটি ব্যবস্থা হয়েছে পাশাপাশি তাদের সঞ্চয় ও লভ্যাংশের অর্থ কিভাবে আয় বর্ধক কাজে ব্যবহার করে জীবন ও টেকসই জীবিকার মান উন্নয়ন করা যায় তার দিক নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন।