।। নিউজ ডেস্ক ।।
পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে আশেপাশের জলাশয় পুকুর, নদী, ডোবা, খাল, বিলগুলোতে। দেখ-ভাল করার অভাবে শিশুর পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। দেখা যায়, মায়েরা ব্যস্ত থাকেন, বাবারা কাজে ঘরের বাইরে এবং বড় ভাই-বোন থাকলে তারা হয়তো স্কুলে থাকেন।
সাম্প্রতিক উলিপুরে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু আকস্মিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে ৩০ জুন থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পানিতে ডুবে ৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) দুপুরে থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার গ্রামে শিশু সুমাইয়া খাতুন মায়ের সাথে নানা মশিউর রহমানের বাড়িতে বেড়াতে এসে সবার অগোচরে বাড়ির পাশের ডোবায় পড়ে ডুবে মারা যায়। রবিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে ধামশ্রেনী ইউনিয়নে পূর্ব নাওড়া বাঁশবাড়ী গ্ৰামে শফিকুল ইসলামের শিশু কন্যা শাম্মী বাড়িতে খেলার সময় সবার অজান্তে বাড়ির পিছনের একটি গর্তের পানিতে ডুবে মারা যায়। রবিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে দূর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই সরকার পাড়া গ্রামে সাহেব আলীর শারীরিক প্রতিবন্ধী পুত্র শাহ্ জালাল বাড়িতে কেউ না থাকায় সবার অজান্তে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ির পাশের পুকুরের পানিতে পরে ডুবে মারা যায়। সোমবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে বজরা ইউনিয়নের খামার বজরা গ্রামে শিশু মারিয়া খাতুন বড় বোন নিহিন খাতুন (৫) পুকুর পাড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। পা পিছলে মারিয়া পুকুরের পানিতে পড়ে ডুবে যায়। এ সময় বড় বোনের আত্ম চিৎকারে মা এবং স্থানীয় লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় তবকপুর ইউনিয়নের বামনপাড়া গ্রামে তবকপুর ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির ছাত্র রায়হান মিয়া সবার অজান্তে বাড়ির পিছনের পুকুরে আরো ৩/৪ জন মিলে গোসল করতে যায়। গোসল করার এক পর্যায় পানিতে ডুবে মারা যায়। শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তবকপুর ইউনিয়নের বামনাছড়া নয়া গ্রামে শফিকুল ইসলামের শিশু কন্যা সুমাইয়া খাতুন সকালে খেলাধুলার এক পর্যায়ে সবার অজান্তে বাড়ি সংলগ্ন পুকুরের পানিতে পরে ডুবে মারা যায়। রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামে শিশুটির বাবা-মা বাড়ির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সবার অজান্তে শিশু শিপা মনি বাড়ির পাশের ডোবার পানিতে পড়ে ডুবে মারা যায়। সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে হাতিয়া ইউনিয়নের কাসারিয়ার ঘাট গ্রামে শিশুটির পিতা-মাতাসহ বাড়ির অন্য লোকজন সাংসারিক কাজে ব্যস্ত ছিল। সবার অজান্তে শিশু রাশেদুল বাড়ির পাশের পুকুরের পানিতে পড়ে ডুবে মারা যায়। একই দিনে বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ফকির মোহাম্মদ সরকার পাড়া গ্রামে শিশুটির পরিবারের লোকজন বাড়িতে কাজ করছিল। সবার অজান্তে শিশু মিরাজ বাবু বাড়ির পাশে ডোবার পানিতে পড়ে ডুবে মারা যায়।
পাঁচ বছরের কম বয়সী মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হওয়া সত্ত্বেও পানিতে ডুবে মারা যাওয়া প্রতিরোধযোগ্য। শিশুদের সাঁতার শেখানো, জলাশয় ঘিরে বেড়া দেওয়া ও প্রাক-স্কুল শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্রের মতো নিরাপদ স্থান তৈরি করা এবং পরিবার, কমিউনিটি ও জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো হাজার হাজার জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত।
শিশুদের সাঁতার শেখার গুরুত্বের ওপর স্কুলের শিক্ষকরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। সাঁতার একটি খুবই ভালো ব্যায়াম। আর এ কারণে প্রতিটি শিশুর শিশুকাল থেকে সাঁতার কাটার অভ্যাস করা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সাঁতারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে পারেন। পাঠ্যপুস্তকেও সাঁতার শেখার গুরুত্ব বিষয়ে অধ্যায় সংযুক্ত করা যেতে পারে। সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সচেতনতাই পারে শুধু পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধ করতে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।