।। নিউজ ডেস্ক ।।
বৈরী আবহাওয়া, সার, বীজ ও কীটনাশকের মূল্যবৃদ্ধিতে কুড়িগ্রামে আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষিদের এবার মাথায় হাত। বৃষ্টিপাত আর উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে মাঠেই বীজ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। পলিথিন-কাঁথা দিয়ে ঢেকেও রক্ষা করা যাচ্ছে না।
এ দিকে সরকারিভাবে সারের কোনো সংকট নেই বলা হলেও কৃষকরা বলছে চাহিদা মতো সার পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও দ্বিগুণ মূল্যে কিনতে হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারি কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, চলতি মৌসুমে রাজারহাট উপজেলার ছিনাই এবং সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ীতে আগামভাবে ফুলকপি এবং বাঁধাকপি চাষ করা হচ্ছে। গত বছর প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে আগামভাবে চাষ করা হলেও এবার ৯০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধা কপি চাষের টার্গেট নিয়েছে কৃষকরা। জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত কোম্পানি থেকে বীজ নিয়ে চারা তৈরির কাজ করা হয়।
প্রথমে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে বীজ বপন করা হয়। সেখানে ১৫ দিন বয়সী চারা তুলে বেডের মধ্যে লাগানো হয়। বেডে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ দিন রাখা হয়। এরপর জমি তৈরি করে সেখানে চারা লাগানো হয়। সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে ফুলকপি বা বাঁধাকপি উত্তোলন করা শুরু হয়। এতে সবমিলিয়ে ১১০ থেকে ১২০ দিনের মাথায় চাষিরা সবজী বিক্রি করার সুযোগ পান।
জেলায় সবজির আঁধার খ্যাত রাজারহাট উপজেলার ছিনাই এবং সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ীতে চাষ হচ্ছে আগামভাবে ফুলকপি ও বাঁধাকপি। বাজারে শীতের এই সবজির চাহিদা থাকায় বেশ কয়েক বছর ধরে এখানকার কৃষকরা আগামভাবে এসব সবজি চাষ করছেন। কিন্তু চলতি বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত আর কড়া রৌদের কারণে বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তার উপর সার ও কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে আগামভাবে চাষ করে এবার বিপাকে রয়েছে চাষিরা।
রাজারহাটের ছিনাই ইউনিয়নের বালার ডিঘিরপাড় খিলপাড় এলাকার কৃষক মৃত আহাদ আলীর ছেলে আব্দুল গফুর (৬৩) জানান, দিন দিন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রান্তিক চাষিরা সবচেয়ে বেশী সমস্যায় ভুগছেন। যারা জমি লিজ নিয়ে বা বর্গা নিয়ে আগাম সবজি চাষ শুরু করেছেন তারা অতিরিক্ত খরচের চাপে দিশেহারা হয়ে পরেছেন। গতবার যে বীজ ৪০০ টাকা দরে কেনা হয়েছিল এবার সেটা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়।
একই উপজেলার মীরেরবাড়ী এলাকার কৃষক কোরবান আলী (৬০) জানান, গরমকালে দুটো পয়সা বেশী পাওয়ার আশায় ফুলকপি লাগাই। কিন্তু এবার খরচ বেশি পরল। ৭৫শতক জমিতে এবার এক লাখ টাকা খরচ হবে। আবহাওয়া ভাল থাকলে শতভাগ লাভ হবে, নাহলে লোকসান গুণতে হবে। গতবার ইউরিয়া ও পটাশ সারের কেজি ছিল ১৮টাকা করে। এবার কিনতে হলো ৩০টাকা করে। এছাড়াও বীজ ও কীটনাশকের দামও বেড়ে গেছে।
একই এলাকার কৃষক আশরাফ আলী (৩৬) জানান, প্রচণ্ড গরমে চারাগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। পলিথিন ও কাঁথা দিয়ে ঢেকেও রক্ষা করা যাচ্ছে না। এদিকে আবার টানা বৃষ্টিও হচ্ছে। আবহাওয়ার এই তারতম্যের কারণে বীজতলা রক্ষা করা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার কৃষকরা খুব একটা বেশী লাভবান হতে পারবে না।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আজিজুল ইসলাম জানান, দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আগামভাবে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ। তবে সম্প্রতি খরা ও বৃষ্টির কারণে চারার কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা নতুনভাবে আবারো চারা রোপণ করছে। তবে সবজির মান বৃদ্ধির জন্য আমরা কৃষকদের জৈব সার ব্যবহার করর পরামর্শ দিচ্ছি। আর আমাদের কাছে রাসায়নিক সার যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ রয়েছে। কোনো সংকট নেই।