।। টেক ডেস্ক ।।
বর্তমান সময়ে যেসব ইস্যু মিডিয়ার কেন্দ্রবিন্দু তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাইবার অপরাধ। সাধারণ অর্থে সাইবার অপরাধ হলো, এমন একটি অপরাধ যা মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন: হ্যাকিং, ব্যক্তির অনুমতি ব্যতীত তথ্যফাঁস, নারী নির্যাতন, ব্ল্যাকমেইল, অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা ইত্যাদি। অর্থাৎ ইন্টারনেট বা মোবাইল ফোনের আধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অপরাধমূলক অভিপ্রায় নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির উদ্দেশ্যে আইন বহির্ভূতভাবে সৃষ্ট অপরাধকে ‘সাইবার অপরাধ’ বলে।
সাধারণত যে ব্যক্তি এই অপরাধ সংগঠন করে তার নিশানাতেও থাকে অন্যের মোবাইল বা কম্পিউটার। তাই একে ‘কম্পিউটার ওরিয়েন্টেড ক্রাইম’ বলেও অভিহিত করা হয়। দেশে সংঘটিত সাইবার অপরাধের আখড়া হয়ে উঠছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুক। কেননা ফেসবুক বা যেকোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানহানিকর, বিভ্রান্তিমূলক, অশালীন, অরুচিকর, অশ্লীল, আক্রমণাত্মক ও উস্কানিমূলক কিছু লেখা বা মন্তব্য করা কিংবা ছবি বা ভিডিও আপলোড করা সাইবার অপরাধের অন্তর্ভুক্ত। সাইবার অপরাধের সূত্রপাত ঘটে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক আবিষ্কারের পর থেকে। সুতরাং এটি আমাদের জন্য নতুন কোনো অপরাধ নয়। কেননা আমরা সবাই কম বেশি ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত। আর ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে আমরা মোটামুটি সবাই অপরাধটি সম্পর্কে জ্ঞাত। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে সাইবার ক্রাইম। আর এ অপরাধের শিকার হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ার্নেস ফাউন্ডেশনের’ তথ্যমতে, সাইবার অপরাধে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী মেয়েরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১৮ বছরের কম ১০.৫২ শতাংশ, ১৮ থেকে ৩০ বছরের কম ৭৩.৭১ শতাংশ। এছাড়াও ৩০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে এ অপরাধের শিকার ১২.৭৭ শতাংশ নারী জনগোষ্ঠী।
সাইবার অপরাধ একটি বাউন্ডারিলেস ক্রাইম। কারণ এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে এক দেশে বসে অপরাধ সংগঠিত করে আরেক দেশের নাগরিকদের ভিকটিম বানানো সম্ভব। তাই প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে সাইবার ক্রাইম। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এক দিকে অনলাইনে কেনাকাটা যেমন জনপ্রিয় হচ্ছে ঠিক তেমনি এই অনলাইনে কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রতারক চক্র। আমরা যদি একটু পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই তাহলে বুঝবো কিভাবে বেড়ে চলছে এই সাইবার অপরাধ।
বাংলাদেশ সাইবার থ্রেট ল্যান্ডস্কেপ রিপোর্ট ২০২০ অনু্যায়ী, গত বছরের তুলনায় যে ধরনের সাইবার অপরাধগুলো বৃদ্ধি পেয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো তথ্য পাচার (ইনফরমেশন লিকেইজ এবং ইনসাইডার ট্রেডিং)। যেটি আসলে স্বল্পতম কারিগরি জ্ঞান এবং ক্ষেত্র বিশেষে কোনো ধরনের কারিগরি জ্ঞান না থাকলেও করা সম্ভব।
সমস্যা হলো, ডিজিটাল পরিমণ্ডলের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য, সময়ের চাহিদা অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করা হলেও, সে সমস্ত আইনের ভিন্নতর ব্যাখ্যার সুযোগ নিয়ে, অনেক সময় ঘটে যায় আরেক ধরনের অপরাধ। হেনস্থা হয় মানুষ, সম্মুখীন হয় আর্থিক, সামাজিক, মানসিক ক্ষতির। ন্যায়বিচারের পরিবর্তে কপালে জুটে হয়রানি আর অসহায়ত্ব।
আমাদের দেশে ডিজিটাল মাধ্যম বা সে সংশ্লিষ্ট যে আইনসমূহ রয়েছে, সেসব আইনে করা মামলাগুলোর ডেটা বিশ্লেষণ করলেই প্রকৃত অবস্থা বেরিয়ে আসবে। কতগুলো মামলায় সাজা হয়েছে? কতগুলো মামলায় অভিযোগ প্রমাণ করা গেছে? কতগুলো মামলা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে? এসব চিত্রগুলো বিশ্লেষণ করে তুলে ধরা এখন জরুরি।
সারা বিশ্বে ডিজিটাল মাধ্যমের নিয়মকানুন, রীতিনীতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। কারণ, ডিজিটাল প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তনশীল একটি প্রযুক্তি। সেই ধারাবাহিকতায়, আমাদের ডিজিটাল প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট আইনেরও সমস্যাজনক জায়গাগুলো চিহ্নিত করে, সেগুলোর জন্য যুগোপযোগী সমাধান বা পরিবর্তন নিয়ে আসা স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া হিসেবেই বিবেচিত হওয়া উচিত।
একজন নির্দোষ লোককে যদি ডিজিটাল আইনে করা মামলায় জামিন দেওয়া না হয় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পর দেখা যায়, তার অপরাধ প্রমাণ করা যায়নি, তাহলে এমনটি প্রতীয়মান হতে পারে যে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বা ডিজিটাল মাধ্যমের জন্য প্রণীত আইন ব্যবহার করে মানুষকে আসলে ভোগান্তিই দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলার জন্য পূর্বে ঢাকায় একটিমাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনাল ছিল। সম্প্রতি দেশের ৮ বিভাগে ৮টি সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।