।। নিউজ ডেস্ক ।।
চাকরির পেছনে না ছুটে মাল্টা চাষে সফলতার মুখ দেখেছেন কুড়িগ্রামের আবু রায়হান ফারুক। পড়াশোনা শেষ করে মনোযোগ দেন কৃষিতে। শুরু করেন সাড়ে সাত একর জমিতে সমন্বিত ফলের চাষ। দেশি ও বিদেশি নানান জাতের ফলের গাছসহ তার বাগানে রয়েছে আড়াই হাজারের বেশি মাল্টা গাছ।
আবু রায়হান ফারুক কুড়িগ্রামের বেলগাছা ইউনিয়নের হরিরামপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে মাল্টা চাষ শুরু করেন।
বুধবার সরেজমিনে (২৩ আগস্ট) দেখা যায়, ফারুকের বাগানে সারিবদ্ধভাবে লাগানো গাছে ঝুলে আছে গ্রিন ব্রি-১ জাতের মাল্টা। কীটনাশক ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষায় ফুড প্যাক দিয়ে মোড়ানো ফলগুলো। এছাড়া মাল্টার পাশাপাশি তার বাগানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের কমলা, লটকন, আম ও আঙ্গুরসহ নানা জাতের ফল গাছ।
২০১৮ সালে করা ফারুকের সমন্বিত বাগানে সবজি ক্ষেতও রয়েছে। একদিকে ফলের বাগান অন্যদিকে সবজি ক্ষেত থেকে হচ্ছে বাড়তি আয়। সমন্বিত এ বাগান দেখতে প্রতিদিনই আসে দর্শনার্থীরা। তার কাছ থেকে অনেকেই পরামর্শ নিয়ে বসতবাড়িতে করেছেন গুচ্ছা মাল্টার বাগান। ফারুকের স্বপ্ন কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হলে ফ্রুটস কর্নার জোন করে কৃষিতে আরও সমৃদ্ধি আনা যাবে।
প্রতিবেশী হারুনুর রশিদ ও আব্দুল হাকিম বলেন, ফারুকের মাল্টা বাগান বেশ সাড়া ফেলেছে। সে চাকরির পিছনে না ছুটে মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছে। ওর বাগান দেখে আমরাও চেষ্টা করছি কিছু করার। ধান, পাট চাষের পাশাপাশি মাল্টা দিয়ে ভালো আয় করা সম্ভব।
বাগানের শ্রমিক আশরাফুল বলেন, আমি এই মাল্টার বাগানে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে আসছি। প্রতিদিন এখান থেকে যে টাকা পাই তা দিয়ে আমার পরিবার ও ছেলেমেয়ের পড়াশুনার খরচ চালাচ্ছি। এখানকার মাল্টা সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা অনেক বেশি।
এ বিষয়ে আবু রায়হান ফারুক বলেন, আমার বাগানে ২৬ জাতের মাল্টা গাছ রয়েছে। এর মধ্যে তিন জাত নিয়ে বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছি। একবিঘা জমিতে মাল্টা চাষে খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। মণপ্রতি মাল্টা ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। বছরে খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা আয় হয় এই বাগান থেকে। তবে বাগানটি আরো বড় করা গেলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, বেকাররা শুধু চাকরির পিছে না ছুটে মাল্টা চাষ করতে পারেন। কৃষিনির্ভর কুড়িগ্রাম অঞ্চলে এখন নানা ধরনের ফলের বাগান দেখা যায়। আমার ইচ্ছে আছে চাকরি করে নয়, কৃষি কাজে স্বাবলম্বী হবো।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোঃ শামসুদ্দিন মিঞা বলেন, জেলায় কৃষকরা বিক্ষিপ্তভাবে মাল্টা চাষ করেছেন। গত মৌসুমে জেলায় ৯ টনের বেশি মাল্টা চাষ হয়েছে। এ মৌসুমে মাল্টা চাষ আরও সম্প্রসারণ হচ্ছে। যদিও মাল্টা চাষের কোন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত নেই। এ ছাড়া তাদের পক্ষ থেকে চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ ও উৎসাহ দেওয়ার কথাও জানান কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা।