।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়া দু’টি সেতু ৩ বছরেও পুনঃ নির্মাণ না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে ৩ ইউনিয়নের ২০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। সেতুর অভাবে পাঁকা সড়কটি দিয়ে যানবাহন তো দুরের কথা পায়ে হেঁটেও চলাচল করতে পারছে না এলাকার মানুষ। বিশেষ করে চরম বিরম্বনায় পড়েছে ওই এলাকার শিক্ষার্থী ও অসুস্থ্য রোগিরা। ফলে সড়ক থাকলেও সেতুর অভাবে ব্রহ্মপুত্র নদী বেষ্টিত পুর্ব পাড়ের মানুষ দুই উপজেলা থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ জানায়, উলিপুর উপজেলার তবকপুর, ধামশ্রেনী ও চিলমারী উপজেলার থানাহাট, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত পুর্ব অঞ্চলের মানুষের দুই উপজেলার সাথে যোগাযোগের সুবিধার জন্য কুড়িগ্রাম-চিলমারী রোডের চুনিয়ার পাড় হতে উলিপুর আজমের মোড় পর্যন্ত ৬.৫০ কিলোমিটার সড়ক ও ২টি সেতু ২০১৫ সালে ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয়। গত ২০১৯ সালের বন্যায় তবকপুর ইউনিয়নের আমতলী সেতু ও চুনিয়ার পাড় সেতুটি দেবে যায় এবং সড়ক ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেই থেকে সেতুর অভাবে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশল অফিস জানায়, আমতলী সেতু পুনঃ নির্মান ও চুনিয়ার পাড় সেতুটি সংস্কারের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্ধ না পাওয়ায় সেতু দু’টি নির্মান করা যাচ্ছে না। সোমবার (২২ আগস্ট) সরেজমিনে সেতু এলাকায় গেলে স্থানীয়রা লোকজন জানায়,সড়কটি পাকা করায় দুই উপজেলার সাথে এ এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা হয়েছিল। কিন্তু বন্যায় সেতু ২টি ভেঙ্গে যাওয়ায় আবারও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এলাকাটি। গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ভাঙ্গা সেতুর পার্শ্বে বাঁশের সাকো নির্মান করে কোন রকমে শুধু মানুষ ও বাই-সাইকেল পাড়া পাড়ের ব্যবস্থা করেছে। সে সাঁকোটিও বর্তমানে ভেঙ্গে মারাত্মক ঝুঁকিপুর্ন হয়ে পড়েছে। তবু মানুষজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমিত ভাবে চলাচল করছে। কিন্ত রিক্সা, ভ্যান, অটো রিক্সা বা চার চাকার গাড়ী চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে কেউ অসুস্থ্য হলে জরুরী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে বিরম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়েছে বিপাকে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পন্য উপজেলার বাজারে নিয়ে যেতে পাচ্ছে না। স্কুল শিক্ষক বশির উদ্দিন জানান, চুনিয়ার পাড়, আকন্দ পাড়া, তামাকু পাড়া, কবিরাজ পাড়া, বান্দার ঘাট,বানু কিষামত পাড়া, হিন্দু পাড়া, রাজারঘাট, বিষ্ণু বল্লভ, খামার তবকপুর, পাগলার ঘাট, বড়–য়া তবকপুর ও আমতলী সহ ২০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সেতুর অভাবে চলাচলের ভোগান্তিতে পড়েছে।
বিষ্ণু বল্লভ গ্রামের আব্দুল জলিল(৬৬) জানান সড়কটি হওয়ার পর রিক্সা, অটো রিক্সা জেএসসহ ছোট বড় যান চলাচল করত ফলে আমাদের খুব সুবিধা হয়েছিল। এখন সব বন্ধ তাই পায়ে হেঁটে কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়। ওই গ্রামের ট্রাক ড্রাইভার বকুল মিয়া (৫৪) জানান,ডিউটি শেষ করে ট্রাক মালিকের ঘরে রেখে রাত বিরাতে অটোতে চড়ে বাড়ী আসতাম এখন হেটে বাড়ীতে আসতে হয়। উলিপুর সরকারী ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী নাজমা বেগম জানান, আমাদের এলাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা কলেজ নাই। সড়কটি নির্মান হওয়ায় আমরা এই এলাকার মেয়েরা স্কুল ও কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্ত সেতু ভেঙ্গে যাওয়ায় আমাদের কলেজে যাওয়া এক রকম বন্ধ হয়ে গেছে। অটো চালক আব্দুল খালেক(৩৮) জানান,আগে বেকার ছিলাম সড়কটি পাঁকা হলে অটো চালিয়ে সংসার চলত। এখন সে রোজগারে ভাটা পড়েছে।
আমতলী বাজারের ব্যবসায়ী আকবর আলী জানান, সড়ক নির্মান হওয়ার পর গ্রামীন বাজারটি জমজমাট হয়েছিল। কিন্ত সেতু ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বাজারে এখন আর আগের মতো লোকজন আসে না, ব্যবসায় মন্ধা চলছে। তবকপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মানিক মিয়া এত দিনে সেতু দুইটির কাজ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তবকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোকলেছার রহমান জানান, সড়কটি পাকা হওয়ায় মানুষের,দীর্ঘ দিনের কষ্ট লাগব হয়েছিল। কিন্তু সেতু ২টি ভেঙ্গে যাওয়ায় ২০ গ্রামের মানূষ আবারও সেই কষ্ঠে পড়েছে। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর এম পি মহোদয় ও উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে সেতু নির্মানের ব্যাপারে যোগাযোগ করেছি।
উপজেলা পকৌশলী কে কে এস সাদেকুল আলম জানান,আমতলী সেতুটি পুনঃ নির্মান ও চুনিয়ার পাড় সেতুটি সংস্কারে প্রকল্প প্র্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্ধ পাওয়া গেলে চলতি বছরে কাজ শুরু করা হবে।##
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/আগস্ট/২২/২২