।। উপজেলা প্রতিনিধি ।।
না ফেরার দেশে চলে গেলেন একটি ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত চিলমারী উপজেলা পরিষদের ৫ম বারের মতো নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন সফল সভাপতি হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন। সেই সাথে চিলমারী হারালো একজন অভিভাবক। ৭১’র এই সৈনিকের ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তার বীরত্বভূষণ নম্বর ১৭২। তিনি একজন সফল চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক ব্যাক্তি এবং সফল পিতা ও অভিভাবক। সোমবার (২২ আগস্ট) ভোরে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন।
শতকত আলী সরকার বীর বিক্রম একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা তিনি বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে পাক বাহিনীকে পরাস্ত করেছিলেন। ১১ নং সেক্টেরের অধিনে হাতিয়ায় সম্মুখ যুদ্ধে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। ৭১’মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে বাংলাদেশসহ এই বাঙ্গালীকে পাকহানাদার বাহীনির কবল থেকে রক্ষা করতে জীবনকে বাজিরেখে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন ঠিক সে ভাবেই জনগনের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। যার আদর্শ নিয়ে এখনো দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা হয়। তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’র ৭ মার্চের ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম ‘সৈয়দপুরে তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙ্গালি সৈনিকদের সঙ্গে পাক আর্মির বেলুচ রেজিমেন্টের সংঘাতের পর তৃতীয় বেঙ্গলের এক প্লাটুনের বেশি সেনা রকেট লাঞ্চার, এমএমজিসহ ভারি অস্ত্র নিয়ে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী হয়ে নদীপথে রৌমারী চলে আসেন। সেখানে সাদাকাত হোসেন ছক্কু মিয়া ও নুরুল ইসলাম পাপু মিয়ার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সুবেদার আলতাফের নেতৃত্বে শুরু হয় প্রশিক্ষণ। তিনি, গাইবান্ধা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারাও প্রশিক্ষণ নিয়ে এখান থেকে বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেন। পাক বাহিনী মুক্তাঞ্চলের খবর জানতে পেরে ট্রেনে চিলমারী এসে শক্ত অবস্থা গড়ে তোলে সেই খবর শুনে তাদের সেই ডিফেন্স ভাঙ্গতে সুবেদার আলতাফের নেতৃত্বে চিলমারী আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল। দু’দিন পর পাকরা ব্রহ্মপুত্র নদ অতিক্রম করে কোদালকাটির ভেলাবাড়ী স্কুলে অবস্থান নিয়েছিলেন। মোহনগঞ্জে তাদের কিছু সহযোগী ছিল। আলতাফ সুবেদারের নেতৃত্বে তিনি শপথ নেন কিছুতেই পাক বাহিনীকে এগোতে দিবেন না। রাতে দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। ৭ দিন ধরে চলে এ যুদ্ধ। যা ‘কোদালকাটির যুদ্ধ’ হিসেবে পরিচিত। পাক বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরদিন যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে বহুজনের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান তারা। কুকুর সেগুলো নিয়ে টানাহেঁচড়া করছিল। শহীদ হন ২১ জন মুক্তিযোদ্ধা। বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশ গ্রহন শেষে উলিপুর হাতিয়া অপারেশনে শওকত আলী বীরবিক্রম প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি গুলিবৃদ্ধ হয়েছিলেন। দেশে স্বাধীনের পর তিনি রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সফল চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তিতে উপজেলা চেয়ারম্যান পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে টানা ৫শ বারের মতো উপজেলা পরিষদের সফল চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এছাড়াও তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সফল সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। শত ব্যবস্থার মাঝেও তিনি জনগনের সেবার পাশাপাশি ছিলেন একজন সফল পিতাও ৬ সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে ডাক্তার দুই মেয়ে ও দুই ছেলে প্রকৌশলী। স্ত্রী খালেদা খানম একজন গৃহীনী ও রত্নগর্ভা মা। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম সোমবার ভোরে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মৃত্যু বরন করেন। প্রথম জানাজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে অনুষ্ঠিত হয়। এবং বিভিন্ন স্থানে জানাজা শেষে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) বেলা ১১ টায় চিলমারী সরকারী কলেজ মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
//নিউজ/চিলমারী//সোহেল/আগস্ট/২২/২২