।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে ক্লাস চলাকালিন সময়ে বাঁশে বাঁধা ফ্যানের জিআই তার ছিঁড়ে ফ্যানের আঘাতে গুরুতর আহত শিরিনা আকতার চারদিন ধরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখন পর্যন্ত তাকে দেখতে আসেনি শিক্ষা প্রশাসন কিংবা উপজেলা প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা। অথচ সরকারি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের অব্যবস্থাপনা এবং নিরাপদ কর্মস্থল না হওয়ায় পাঠদানরত অবস্থায় আহত হন এই শিক্ষিকা। বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে শিক্ষিকার চোখের ব্যান্ডেজ খুলে দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাকে জানানো হয়নি তার ডান চোখ একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। সে কারণে শিরিনা আকতার যারই দেখা পাচ্ছে তাকেই আঁকুতি জানাচ্ছে দোয়া করবেন আমার চোখ যেন ভাল হয়।
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) ঘটনাস্থল দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুর দুইটার গিয়ে জানা যায় দেড়টার সময় স্কুলটি ছুটি হয়। এসময় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় দুর্বলভাবে ফ্যান বাঁশের সাথে বেঁধে দেয়ায় মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। এতে স্কুলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা রক্ষা পেলেও শিক্ষিকা শিরিনা আকতার তার চোখ হারিয়ে অসহ্য যন্ত্রনায় হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করছেন।
স্থানীয় অধিবাসী স্কুলের সামনের বাড়ীর তোফায়েল হোসেন (৫৫) ও উকিল বর্মণ (৫০) জানান, বাচ্চাদের মধ্যে কারো চোখ ফেঁটে গেলে এখানে তুলকালাম কান্ড হয়ে যেত। তখন সরকারের সকল দপ্তরের লোকজন এখানে ছুটে আসতো। হতো থানা পুলিশ। অথচ শিক্ষকের ক্ষতি হওয়ায় বিষয়টি সেভাবে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রাক্তন শিক্ষক রাজেন্দ্রনাথ সরকার জানান, দুর্বল পাতলা বাঁশ দিয়ে ফ্যান আটকানো হয়েছে। বাঁধনও ছিল আলগা। ফ্যান ঘোরানোর সময় প্রচন্ড আন্দোলন খেয়ে বাঁধন খুলে ফ্যানটি পরে গেছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা বলে জানান তিনি।
গোড়াই দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামিমা ইয়াসমিন জানান, স্কুলটির একেবারে ভগ্নদশা ছিল। ২০০০-২১ অর্থবছরের ক্ষুদ্র মেরামতের দেড় লাখ টাকা ও ২০২১-২২ অর্থবছরের স্লিপের ৫০ হাজার টাকা দিয়ে স্কুলের মাটি কেটে স্কুল ঘর পূণনির্মান করা হয়। বন্যায় স্কুলের মেঝে ভেঙ্গে গেছে। দুর্বল বাঁশ দিয়ে ফ্যান আটকানোর বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। তবে তিনি দাবী করেন একজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন অবস্থায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে পরলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন থেকে রোগীকে দেখতে জাননি কেউ। বাড়িয়ে দেননি সহায়তার হাত। এটা অত্যন্ত দু:খজনক। হতদরিদ্র এই স্কুলটি সংস্কার ও উন্নয়নে নজর দেয়া দরকার। তবে দুর্ঘটনার সময় তিনি স্কুলে ছিলেন না বলে দাবী করেন।
এদিকে আহত সহকারি শিক্ষিকা শিরিনা আকতারকে ফোন করলে তিনি হাঁউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত স্বরে উৎকণ্ঠা নিয়ে জানান আমার চোখটি ভাল হবে তো! নষ্ট হয়ে যাওয়া চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকীর মতো কিছু একটা অনুভব করছেন বলে জানান তিনি। তার চোখ যেন ভাল হয় এজন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন। এই দুর্ঘটনার পর তার একমাত্র মেয়ে আবৃত্তি এখনো মাকে দেখতে পায়নি। সে কুড়িগ্রামে তার দিদার সাথে অবস্থান করছে। মেয়েকে দেখার জন্য আকুল হয়ে আছেন তিনি।
শিরিনা আকতারের স্বামী শেখ আলমগীর কবীর জানান, সে সরকারি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ছিল। এটি নিছক দুর্ঘটনা না অবহেলা এর দায় কে নিবে। চারদিন ধরে সে বিছানায় অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার ডান চোখটি পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে গেছে। রোগীর মানসিক অবস্থা খুবই নাজুক। ফলে এই চরম সত্যটি তাকে জানাতে পারছি না। অন্যদিকে তার চিকিৎসায় কাড়িকাড়ি টাকা খরচ হচ্ছে। একে সারাজীবনের জন্য চোখ হারিয়ে পঙ্গু হল। যাদের কারণে এই আর্থিক ও এবং অঙ্গহাণির ঘটনা ঘটল তদন্ত করে আমি তার বিচার দাবী করছি।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম জানান, সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক একটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন পাইনি। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে। তারা নিয়েছে কিনা জানা নেই। আমি জেনে পরে জানাবো।