।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামের উপজেলাগুলোতে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং এর বিড়ম্বনায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মানুষজন। সরকার ঘোষিত বিদ্যুতের ঘাটতি পুরণে এলাকাভিত্তিক এক ঘন্টা লোডশেডিং এর নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেনা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ । বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং বেশি হওয়ার কারণে তীব্র গরমে সকল শ্রেণীপেশার মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
এদিকে লোডশেডিং এর প্রভাব পড়েছে ব্যাটারি চালিত ফ্যান ও চার্জার লাইটের দোকানে। নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরা ভিড় করছে ইলেকট্রিক সামগ্রীর দোকানগুলোতে। সেখানেও চাহিদানুযায়ী চার্জার ফ্যান বা লাইট পাওয়া যাচ্ছেনা। কেউ কেউ ছুটছেন ইনস্ট্যান্ট পাওয়ার সাপ্লাই (আইপিএস) এর মাধ্যমে চার্জার বিদ্যুৎ ব্যবহার করার জন্য আইপিএস কিনতে। সেখানেও বিপত্তি হচ্ছে আইপিএস মালামাল না পাওয়ায়। অন্যদিকে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও রিকশা চালকরা পড়েছেন বিপাকে। কেন না লোডশেডিং এর কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে চার্জ করতে না পাড়ায় দৈনন্দিন আয় নিয়ে বিপাকে আছেন তারা।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) জেলা শহরে রাত ৭টা ও রাত ১২টায় লোডশেডিং এর কবলে ছিল পৌরবাসী। ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল শহর । কোথাও নিভু নিভু আলো জ্বলছে। প্রচন্ড তাপদাহে মানুষজন ঘামে ঝড়া শরীর নিয়ে বের হয়ে পড়েছে রাস্তার মোড়ে কিংবা খোলা উঠানে। দোকানিরা মোমবাতির স্বল্প আলোয় ব্যবসা করছেন। কেউবা হাতপাখা ঘুরাচ্ছেন একটু বাতাসের জন্য। অন্যদিকে ঘন্টার পর ঘন্টা গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ না থাকায় উঁচু শুকনো জমিতে রোপা আমন চাষের জন্য জমিতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা।
নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) অফিস সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা শহরে দৈনিক ৩০ হাজার গ্রাহকের দৈনিক চাহিদা প্রায় ১২ মেগাওয়াট কিন্তু তার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৬-৭ ও ৮ মেগাওয়াট।
অন্যদিকে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিস সুত্রে জানা গেছে, পল্লী বিদুৎ সমিতির আওতায় কুড়িগ্রামের ৭টি উপজেলায় ৪ লাখ ৬৬ হাজার গ্রাহকের দৈনিক চাহিদা ১২৯ মেগাওয়াট হলেও তার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৭৩ মেগওয়াট। এদিকে দিনের চাহিদা ৫৬ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ৩১ মেগাওয়াট। রাতের চাহিদা ৭৩ মেগাওয়াট, পাওয়া যাচ্ছে ৪২ মেগাওয়াট।
কুড়িগ্রামের সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের কলেজ পাড়ার ব্যবসায়ী মিনহাজুল বলেন, প্রচুর গরম আমাদের এখানে। বিদ্যুৎ ঠিক মত না থাকায় রাতে ঘুমাতে পারছি না। সবচেয়ে খারাপ লাগছে ছোট ছোট বাচ্চারা ঘুমাতে পারছে না। সবমিলিয়ে দেখা যাচ্ছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রায় ৫-৭ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।
কুড়িগ্রাম পৌর শহরের ঘোষপাড়া এলাকার সৌরভ ইলেকট্রিক এর স্বত্ত্বাধিকারী আলিম বলেন, আমাদের শহরে দেখা যাচ্ছে গড়ে ৩-৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বর্তমানে যে পরিমাণে গরম পড়ছে বিদ্যুৎ ছাড়া ২ মিনিটও থাকা যায় না। বিদ্যুৎ ঠিকমতো না থাকার কারণে ব্যবসা করতে সমস্যা হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার হাবিবুর রহমান জানান, লোডশেডিং এর সিডিউল বিপর্যয়ে চরম ভোগান্তিতে আছি আমরা। কবে এর থেকে পরিত্রাণ পাব জানিনা।
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (কারিগরী) মোঃ আবির হোসেন জানান, কুড়িগ্রামের ৭টি উপজেলায় গ্রহকের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা সিডিউল অনুযায়ী যখনি লোডশেডিং দিচ্ছি ১ ঘন্টার বেশি দিচ্ছি না।
কুড়িগ্রামের নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আলিমুল ইসলাম সেলিম জানান, জাতীয় গ্রিড থেকে বরাদ্দ কম পাওয়ার কারণে লোডশেডিং একটু বেশি হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে জেলা শহরে ৩-৪ ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এখানে ৩০ হাজার গ্রাহকের জন্য ১২ মেগাওয়াট চাহিদা। সেখানে ৬-৭ ও ৮ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে।