।। নিউজ ডেস্ক ।।
আসন্ন ঈদ উল আজহাকে ঘিরে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন হাটবাজারে জমে উঠতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে পশুর হাটে বিক্রেতার ভীড় ততই বাড়ছে। কিন্তু সে তুলনায় হাটগুলোতে নেই পশু ক্রেতা। এ অবস্থায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক বিক্রেতাসহ খামারিরা।
দুই দফা বন্যার কারণে কুড়িগ্রামের সবগুলো নদ-নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলের মানুষজনের গবাদি পশু লালন পালন ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় এসব এলাকার মানুষজন পশু বিক্রির চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে শুধুমাত্র ঈদের কোরবানিতে বিক্রির জন্য গৃহস্থ পর্যায় থেকে শুরু করে খামারি-ব্যবসায়ীরা পশু লালন পালন করে থাকেন। এসব পশুও যাচ্ছে আশেপাশের হাটবাজারে এমনকি দূরদূরান্তের হাটবাজারে। তাই পশুর হাটে আমদানি বেশি থাকায় তুলনামূলকভাবে ক্রেতা সংকটে রয়েছে বিক্রেতারা।
জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্র জানায়, জেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় ১হাজার ৭০টি খামার রয়েছে। এতে গরুর সংখ্যা ৯ লাখেরও বেশি। আসন্ন ঈদ উল আজহা উপলক্ষে জেলায় সব মিলে পশুর চাহিদা রয়েছে ৯০ হাজার। আর প্রান্তিক কৃষক থেকে খামারি পর্যায়ে প্রস্তুত আছে ১লাখ ৩৪ হাজার গবাদিপশু। এখানকার চাহিদা মিটিয়ে পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
মঙ্গলবার (০৫ জুলাই) সদর উপজেলার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপুরহাটের পশুরহাট ঘুরে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পশু নিয়ে হাটে এসেছেন পাইকারি বিক্রেতা, খামারি ও গবাদিপশু পালনকারি প্রান্তিক কৃষকগণ। দেশি গরুতে বাজার ভরে গেছে। তারা প্রতি বছর ঈদ উল আজহার সমায় তাদের পালিত গবাদিপশু বিক্রি করে সংসারের উন্নয়ন ঘটান। বিক্রেতারা বড় গরুর দাম হাঁকছেন দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়াও ৯০ থেকে ১০০ কেজি ওজনের গরুর দাম ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। কোরবানির সম্মিলিত ও একক ক্রেতাসহ জেলার বাইরে থেকে বেশ কিছু পাইকার এসেছেন। সাধারণ ক্রেতা ও পাইকারদের সংখ্যা হাতে গোনা। তাই ক্রেতা-সংকট থাকায় জমে উঠছে না ঐতিহ্যবাহী কোরবানির এ হাটটি।
একাধিক খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোখাদ্যেরে দাম তুলনামুলক বৃদ্ধি পাওয়ার পরেও কোরবানির পশুর দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আছে। এবার মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি। বিজিবির কড়া নজরদারিতে ভারতীয় গরু কম আসায় বেশ লাভবান হবেন বলে আশা করছিলেন তারা। কিন্তু আগাম বন্যার কারণে হাটে আমদানি অনেক বেশি থাকায় ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে।
ঝুনকার চর থেকে কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর হাটে গরু বিক্রি করতে আসা হাফিজুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত বন্যা হওয়ার কারণে হাটে গরুর আমদানি এবার অনেক বেশি। দু’টি নিয়ে এসেছি। পাইকারও নাই, কেউ দামও বলছে না। কারণ আমাদের ওখানে এখনো সবমাঠ বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। গরুর খাদ্যের খুব সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বিক্রি করতে হাটে নিয়ে এসেছি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, বন্যার কারণে আজ হাটে বিভিন্ন গবাদিপশুর আমদানি অনেক বেশি। আমদানি হিসেবে তুলনামূলক ক্রেতা কম। আর দাম গতবারের চেয়ে একটু কম বোঝা যাচ্ছে। এই হাটে বেশিরভাগ গরু বিভিন্ন চর থেকে এসেছে।
যাত্রাপুর হাট ইজারাদার সেলিম মিয়া বলেন, আমাদের হাটে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক গরু আসছে। কিন্তু ক্রেতা একেবারেই নেই। এবার হাট জমবে কিনা তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছি। তবে আরও তো সময় আছে দেখা যাক আল্লাহ ভরসা।
উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর হাট ঘুরে দেখা যায় একই অবস্থা। পশুর হাটে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতাই বেশি। বিক্রেতারা হাটে গবাদি পশুর দাম হাঁকছেন বেশি। বিক্রেতারা শুধু দাম শুনেই যাচ্ছেন।
সমন্বিত দলের ক্রেতা আব্দুস সালাম জানান, তারা ৭জন মিলে একটি গরু কোরবানি দেবো। কিন্তু বিক্রেতা ১০০ কেজি ওজনের গরুর দাম চাইছেন ৭৫ হাজার টাকা যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ হাজার টাকা বেশি। তারা আরো অন্য হাট ঘুরে দাম যাচাই করে তবেই পশু কিনবেন।
দুর্গাপুর হাটে ছাগল বিক্রি করতে আসা মোজাম্মেল হক জানান, তার ৫টি ছাগলের খাসি রয়েছে। গড়ে প্রতিটির ওজন ১০-১২কেজি। দাম চাচ্ছেন একেকটির ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। কেউ কেউ দাম শুনে সরে যাচ্ছেন আবার কেউ কম দাম বলছেন। দেখি কী হয়!
কুড়িগ্রাম পৌর বাজারের পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন পশুর ভিড়। অনেক পশুকে বিভিন্ন রঙ বেঙয়ের কাপড়, রশি দিয়ে নকশা করে পশু সাজিয়ে নিয়ে এসেছেন কয়েকজন বিক্রেতা। সে সব পশুর হৃষ্টপুষ্ট চেহারা বেশ আকৃষ্ট করছে ক্রেতাদের। কিন্তু দাম ঠেকে কেউ কিনছেন না।
পৌর এলাকার জলিল বিড়ি মোড় এলাকার বিক্রেতা মো: এরশাদুল বলেন, প্রায় ৩২০ কেজি ওজনের গরু নিয়ে এসেছি। দাম চেয়েছি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ক্রেতার দাম বলেছে ১ লাখ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। বন্যার কারণে এবার পশু আমদানি বেশি বলে দাম কম বলছে ক্রেতারা।
প্রায় ২২ কেজি ওজনের ২টি খাসি নিয়ে এসেছেন ডাকুয়াপাড়ার খলিলুর রহমান। তিনি জানান একেকটি খাসির দাম চেয়েছেন ২০ হাজার টাকা যেখানে ক্রেতারা বলছেন ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
গরু ক্রেতা মো: সাদ্দাম হোসেন বলেন পশুর হাট ঘুরে দেখলাম পশুর সংখ্যা বেশি কিন্তু ক্রেতা কম। তবে দাম স্বাভাবিক মনে হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পৌর বাজার হাট ইজারাদার হায়দার আলী জানান, জেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবারে হাটে পশুর সংখ্যা বেশি। সে তুলনায় ক্রেতা কম। আবার দামও কম। দূরের পাইকাররা আসতে শুরু করেছে। আশাকরি কোরবানির পশুর হাট জমে উঠবে।
কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, জেলায় কোরবানির পশু চাহিদা প্রায় ৯০ হাজার। প্রস্তত রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৪ হাজার গবাদি পশু। এখানকার চাহিদা মিটিয়ে বাকি পশুগুলো যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ইতোমধ্যে কোরবানির হাট শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু হাট পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ক্রেতার চেয়ে গবাদিপশুর আধিক্য। দেশের দূর দূরান্তে থেকে পাইকাররা ও সাধারণ ক্রেতা এলে স্থানীয় বিক্রেতারা তাদের গবাদি সব পশু বিক্রি করতে পারবেন এবং লাভবান হবেন। এখনও সময় আছে, ঈদের হাট পুরোদমে জমে উঠবে আশাকরি।