।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামে প্রচন্ড রৌদ্রতাপ আর ভ্যাপসা গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুতের মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এ জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গত ৪ দিন থেকে ২৪ ঘন্টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ১২ ঘন্টারও কম। যা চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম। এ অবস্থায় পৌর এলাকার নেসকোসহ গ্রাম এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে ক্ষোভ তৈরী হচ্ছে মানুষজনের মাঝে।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) সূত্রে জানায়, কুড়িগ্রাম পৌরসভা ও সদর উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত এলাকায় নেসকো বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এর আওতায় ৩০ হাজারের উপরে মিটার রয়েছে। যাতে দৈনন্দিন চাহিদা পিক আওয়ারে ১২ মেগাওয়াট, সরবরাহ ৬ মেগাওয়াট এবং অফ পিকআওয়ারে চাহিদা ৮ মেগাওয়াট এর বিপরীতে সরবরাহ মাত্র ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ কারণে নেসকো কুড়িগ্রামের আওতাধীন ৭টি ফিডার লাইনে পর্যায়ক্রমে ৫০ ভাগের কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাসাবাড়ি, অফিস আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হোটেল রেঁস্তোরা, দোকানপাটসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতের অভাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার মোক্তারপাড়ার রাশেদুল ইসলাম জানান, বিদ্যুতের সমস্যায় বাসায় ঠিকমত পানি সরবরাহ হচ্ছে না। বাসায় অন্যান্য কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে। হাটিরপাড়ের গৃহিনী আয়েশা খাতুন বলেন, রান্না করা থেকে সাংসারিক সব কাজ বিঘিœত হচ্ছে বিদ্যুতের সংকটে। ফ্রিজের সংরক্ষিত খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ঘোষপাড়াস্থ ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম বলেন, কদিন থেকে বিদ্যুতের সংকটের কারণে দোকানে ঠিক মতো বেচাবিক্রি হচ্ছে না। এ অবস্থা কবে ঠিক হবে জানিনা।
কুড়িগ্রাম – লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (কুলাপবিস) সূত্রে জানা যায়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার মধ্যে ৭ উপজেলার জন্য পিকআওয়ারে চাহিদা ৭১ মেগাওয়াট সরবরাহ ৩০-৩১ মেগাওয়াট, অফপিকআওয়ারে চাহিদা ৫২ মেগাওয়াট এর বিপরীতে সরবরাহ মাত্র ২৭-২৮ মেগাওয়াট। তবে রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা জামালপুর জেলার সাথে সংযুক্ত। জেলার মধ্যে ৩৩ কেভি লাইনের জন্য ৬টি ফিডার ও ১১ কেভি লাইনের জন্য ৬২টি ফিডারের আওতায় ৪ লক্ষ ৮০ হাজার গ্রাহক রয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক রাজারহাট উপজেলার ফরকেরহাট এলাকার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, দিনে রাতে বিদ্যুৎ কখন আসে বুঝিনা, কিন্তু বিদ্যুৎ বিহীন থাকি এটা বুঝি। মনে হয় আগের সেই বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছি।
নাগেশ্বরী উপজেলার নাখারগঞ্জ সরকারপাড়া গ্রামের পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক আব্দুল কাদের বলেন, আমার ছেলে আর ভাতিজা দু’জনই এসএসসি পরীক্ষার্থী। লোডশেডিং এর কারণে দিনরাতে অর্ধেকের কম সময় বিদ্যুৎ পাওয়ায় তাদের পড়াশোনা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।
চিলমারী উপজেলার সবুজ পাড়ার অনলাইন ব্যবসায়ী সোহেল হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ সংকটের কারণে আমার ব্যবসার সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ যাওয়া আসার খেলায় দোকানের একটি দামী কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেছে। এমন অবস্থা চললে আমরা আরো ক্ষতির মুখে পড়বো।
এ বিষয়ে নেসকো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আলিমুল ইসলাম সেলিম জানান, পাওয়ার উৎপাদনে ঘাটতি থাকায় ন্যাশনাল গ্রিড থেকে আমাদের চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছি। সরবরাহ পেলে এ অবস্থার উন্নতি হবে। আমাদের সব ফিডারে বিদ্যুৎ সম বন্টন করার চেষ্টা করছি। এ অবস্থা কতদিন চলবে জানি না।
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বিতরণ) মো: নুর আলম জানান, জেলার জন্য মোট চাহিদার কম পাওয়ায় সব ফিডারে লোডশেডিং চলছে। গ্যাস সরবরাহ কম ও জ্বালনির মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। তাই পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারের সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চাহিদার বিপরীতে কম সরবরাহ করছে। এ কারণে সক্ষমতা থাকা সত্বেও গ্রাহকদের সঠিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে গ্রাহকদের স্বস্তি ফিরে আসবে।