।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামে ছাত্রলীগ কর্মী শামীম আশরাফ বাবলু হত্যায় পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে জেলা ছাত্রলীগ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা ছাত্রলীগ বাবলু হত্যার প্রতিবাদে ও জড়িতদের গ্রেফতারে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে দেড়ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করে। অপরদিকে সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও এলাকাবাসীর ব্যানারে শহরের ত্রিমোহনী বাজারে ঘড়যন্ত্রমূলক মামলা থেকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান লিটন মিয়ার নাম প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ ১নং আসামী রাশেদা বেগমকে গ্রেফতার করে কোর্টে সোপর্দ করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ খান মো. শাহরিয়ার।
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে জেলা ছাত্রলীগের সমাবেশ ও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাবলুর পিতা শহিদুল ইসলাম, মাতা মনোয়ারা বেগম, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, সভাপতি রাজু আহমেদ প্রমুখ। অপরদিকে ত্রিমোহনীতে হত্যা মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নাম দেয়ার প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ মজুনু, বেলগাছা মহিলা ইউপি সদস্য আনোয়ারা বেগম, আমির হোসেন, সুমা আক্তার প্রমুখ।
জেলা ছাত্রলীগের সমাবেশে বলা হয়, একটি পক্ষ সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরী করে নানান ছুতোয় সাধারণ মানুষের উপর হামলা করছে। হাত-পা কেটে নিচ্ছে। হত্যা করা হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মীদের। এদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক।
অপরদিকে ত্রিমোহনীতে প্রতিবাদ সমাবেশে বলা হয়, একটি মহল নানাভাবে রাজনৈতিক বিরোধীতাকে কাজে লাগিয়ে মামলা-মোকদ্দমায় নিরিহদের নাম দিয়ে তাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। এটা বন্ধ করা হোক।
এদিকে এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের নীলকণ্ঠ গ্রামের মৃত: আজিজুল হকের পূত্র শহিদুল ইসলামের সাথে একই পাড়ার আলী হোসেনের স্ত্রীর পরকীয় আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৮ জুন রাত ১টার দিকে আলী হোসেনের উঠানে একটি সালিশ বৈঠক বসে। সেখানে বেলগাছা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সেক্রেটার লিটন মিয়া, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য লোকজনেরা সালিশ বৈঠকে উপস্থিত হয়। সেখানে অভিযুক্ত শহিদুল ইসলামকে ডাকা হলেও সে সেখানে যায়নি। পরে সালিশের লোকজন শহিদুলকে ডাকতে তার বাড়ীতে যায়। সেখানে শালিসকারীদের সাথে শহিদুলের ছোট পুত্র ও জেলা ছাত্রলীগ কর্মী শামীম আশরাফ বাবলুর সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় এজাহারে উল্লেখিত আসামী বাপ্পী মিয়া ও তার পিতা নুরল কষাই দুজনে লাঠিসোটা দিয়ে বাবলুর উপর হামলা করে। এসময় চেয়ারম্যানের নির্দেশে আনোয়ার হোসেন, হ্যাভেন ও মাহবুব বাড়ীর অপর সদস্যগণের উপর হামলা করে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। এসময় গুরুতর আহত বাবলুকে রাতেই কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। রংপুরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলাকালীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় গত ২৯জুন নিহত বাবলুর বড় ভাই মশিউর রহমান বাদী হয়ে ১৭জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৫/৭জনের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। সেখানে বেলগাছা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে ৬নম্বর আসামী করা হয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজু আহমেদ জানান, চেয়ারম্যানের উষ্কানীতে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটনো হয়েছে। বাবলু আমাদের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ছিল। তাকে ইচ্ছে করেই হত্যা করা হয়েছে। আমরা জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ ব্যাপারে বেলগাছা ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন মিয়া বলেন, আমাকে সালিশী বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। আমি সেখানে উপস্থিত হই। কিন্তু অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত না হওয়ায় আমি সেখান থেকে চলে আসি। পরে বাবলুকে কারা মেরেছে আমি জানি না। আর ঘটনার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত খুনীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসুক সেটা আমিও চাই। কিন্তু ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এজাহারে আমার নাম দেয়া ঠিক হয়নি। এরই প্রতিবাদে এলাকাবাসী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের লোকজন ত্রিমোহনীতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ খান মো. শাহরিয়ার জানান, এক নং আসামী রাশেদা বেগমকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে সোপর্দ করা হয়েছে। জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশ জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।