।। নিউজ ডেস্ক ।।
‘ঋণ করে পটোল আবাদ করলং। তাক সোগে বানের পানি খায়াগেইল। এ্যালা হামরা খামোকি আর কিস্তির টাকা শোধ করমো ক্যামনে। এই চিন্তায় তো আর ঘুম ধরেনা বাহে।’ কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের উত্তর নওয়াবশ গ্রামের মেহের জামাল পটোল ক্ষেতের পাশে দাড়িয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে এসব কথা বলেন।
কুড়িগ্রাম ধরলা ব্রীজ পূর্ব প্রান্তে যাত্রাপুর সড়কের পাশে আড়াই বিঘা জমিতে পটোলের চাষ করেন কৃষক মেহের জামাল (৬০)। খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। স্বপ্ন ছিলো আড়াই লাখ টাকা আয় হবে সিজেন শেষে। প্রতি সপ্তাহে পটোল বিক্রি করছিলেন ৫হাজার টাকা। গত একমাস থেকে পটোল তুলে বিক্রি করছিলেন আর স্বপ্ন বুনছিলেন সামনের ঈদ ভালোভাবে করতে পারবেন। সংসারের খরচ জুগিয়ে শোধ হবে ঋণ। কিন্তু বিধিবাম আকস্মিক বন্যায় ক্ষেত তলিয়ে যায় পানিতে। ৮দিন থেকে পানিতে ডুবে আছে। পাতা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। এটা গাছ মরে যাওয়ার লক্ষণ। এসব তথ্য জানিয়ে একরাশ হতাশা নিয়ে মেহের জামাল বলেন,‘ আমার সব স্বপ্ন শেষ, বানের পানিতে ভেসেগেলো। বাড়িতেও পানি। আয় রোজগারও নেই। দুই ছেলেকে নিয়ে এখন কেমন করে চলবো। ধার-কর্য্যও মানুষ দিতে চায় না। এর উপর কিস্তির টাকা নেয়ার জন্য অফিসের লোক চাপ দিচ্ছে।’
তিনি আরো জানান, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২৬হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। সপ্তাহে কিস্তি ৭০০টাকা। আর স্থানীয় উত্তর নওয়াবশ আলোকিত সমিতি থেকে নিয়েছেন ২০ হাজার টাকা। এখানে প্রতিদিন কিস্তির টাকা দিতে হয় ১২০টাকা। ঘরে খাবার নাই, হাতে কাজ নাই, নাই টাকা তারপরও কিস্তির টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। এমন অবস্থা বাড়িঘর ছেড়ে পালাতেও পারছি না। ত্রাণ বা কোন সহায়তা সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত তার ভাগ্যে জোটেনি। কৃষি বিভাগ থেকে কোন প্রনদনা পাবে কি না তাও জানেননা তিনি। এরকম দুর্যোগে কৃষিবিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা কোন কর্মী এখন পর্যন্ত খোজ নেয়নি।
মেহের জামাল এর বাড়ি ছিলো আগে ভেলাকোপা গ্রামে। তিন দফা নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয়েছেন তিনি। এক সময়ের গৃরস্থ মানুষ এখন কৃষি শ্রমিক। ৫মাইল দূরে উত্তর নওয়াবশ গ্রামে এসে বাড়ি করেন। নদী ভাঙ্গনের ঝুকি না থাকলেও বন্যার পানি উঠেছে ঘরে। মেহের জামালের মতো বর্গা চাষি, ছোট চাষিদের বেহাল অবস্থা। ক্ষতি কি ভাবে কাটিয়ে উঠবে এ চিন্তা গ্রাস করছে তাদের।
কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুর রশিদ জানান, চলতি বন্যায় এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ফসল ডুবেগেছে ১৫হাজার ২০০ হেক্টর জমির। এর মধ্যে সবজি ক্ষেত রয়েছে এক হাজার ৬৪৫ হেক্টর। এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা হয়নি। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এ পক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। তখন ক্ষতি গ্রস্থ কৃষকের তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। প্রনোদনার বরাদ্দ পেলে পরবর্তীতে তা বিতরণ করা হবে।