।। লাইফস্টাইল ডেস্ক ।।
সচরাচর মানুষ যেসব দুর্ঘটনার শিকার হয়, তার অন্যতম পুড়ে যাওয়া। শরীরের কোনো অংশ পুড়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারলে পরবর্তী সময়ে ক্ষতির পরিমাণ কম হয়।
ধরনভেদে আগুনে পোড়ার প্রাথমিক চিকিৎসার কিছুটা ভিন্নতা আছে। বাড়িঘরে আগুন লেগে পুড়ে গেলে তাকে থার্মাল বার্ন, এসিডের কারণে পুড়ে গেলে কেমিক্যাল বার্ন এবং বৈদ্যুতিক কোনো উৎসে পুড়ে গেলে ইলেকট্রিক্যাল বার্ন বলা হয়।
বিভিন্ন প্রকার পোড়ার প্রাথমিক চিকিৎসা
থার্মাল বার্ন ও করণীয়
➤ আক্রান্ত ব্যক্তিকে উৎস থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এবং নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে দৌড়াতে নিষেধ করুন। দৌড় দিলে আগুনের মাত্রা বাড়বে। এতে শরীরে বিভিন্ন অংশে আগুন ছড়াবে। রোগীকে মাটিতে বা মেঝেতে শুতে বলুন। লক্ষ রাখতে হবে বেশি পোড়া অংশ যাতে উপরের দিকে থাকে।
➤ মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া যাবে না। আমাদের সবার ধারণা মাটিতে গড়াগড়ি খেলে আগুন নিভে যায়। কিন্তু এতে হীতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। এতে শরীরের যে অংশ পুড়েনি সে অংশও পুড়ে যেতে পারে।
➤ যদি রোগী কথা বলতে না পারে বা অজ্ঞান হয়ে যায় সেক্ষেত্রে রোগীকে মাটিতে চিৎ করে শুইয়ে দিন। দুই পা উপরে তুলে ধরে ওই জায়গা থেকে নিরাপদে সরিয়ে আনুন।
➤ যদি আগুনের সাথে প্রচুর ধোয়া থাকে তবে যথাসম্ভব নিচু হয়ে থাকুন। এতে ধোঁয়া কম থাকায় আপনি শ্বাস নিতে পারবেন। কারণ ধোঁয়া, গরম বাতাস সবসময় ঊর্ধ্বমুখি থাকে।
➤ শরীরের পোড়া অংশে তাৎক্ষণিকভাবে পানি ঢালতে থাকুন। টেপের পাইপ দিয়ে পানি ঢালতে পারেন। যদি পানি না পাওয়া যায় তবে অন্য কোনো অদাহ্য পদার্থ যেমন দুধ, কোমল পানীয় ব্যবহার করতে পারেন। ভারী সুতির কাপড় দিয়ে শরীর মুড়িয়ে রাখতে পারেন। কখনো কাদা বা মাটি পোড়া জায়গায় দেওয়া যাবে না।
➤ আগুনের উৎস থেকে রোগীকে সরানোর পর শরীরের সমস্ত কাপড় চোপড়, জুতা, মোজা, বেল্ট, অলংকার খুলে ফেলতে হবে।
➤ নিজে থেকে কোনো মলম, লোশন, পেস্ট ইত্যাদি লাগানো যাবে না।
➤ দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।
কেমিক্যাল বার্ন
এসিড বা এলকালি দিয়ে যে বার্ন হয় তাকে কেমিক্যাল বার্ন বলে।
➤ কেমিক্যাল বার্ন এর ফলে নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। দরকার হবে গ্লাভস, মাস্ক, ও চোখের প্রটেকশন নিতে হবে।
➤ জামা, কাপড়, অলংকার খুলে রাখতে হবে।
➤ পানি দিয়ে আক্রান্ত জায়গা প্রশমিত করতে হবে।
ইলেক্ট্রিক্যাল বার্ন
বিদ্যুতের সাথে সংস্পর্শে যে বার্ন হয় তাকে ইলেক্ট্রিক্যাল বার্ন বলে। ইলেক্ট্রিক্যাল বার্নের ফলে শরীরের ভিতেরর মাংস, নার্ভ রক্তনালী মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
➤ এ ধরনের পোড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজে নিরাপদ রেখেই অন্যকে উদ্ধারে সহায়তা করবেন।
➤ বৈদ্যুতিক উৎস যতো দ্রুত সম্ভব বন্ধ করে দিন।
➤ রোগীকে বিদ্যুৎ উৎস থেকে সরানোর পর রোগীর নড়াচড়া, পালস, শ্বাস প্রশ্বাসের গতি লক্ষ করুন। এক্ষেত্রে রোগীর হার্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। হার্ট বন্ধ হয়ে গেলে সি.সি. আর (কার্ডিওপালসনারি রিসাসিটেশন) দিতে হবে। অর্থাৎ রোগীর বুকের মাঝখানে দুই হাত দিয়ে চাপ দিতে হবে। মিনিট ৩০ বার। মুখ দিয়ে শ্বাস দিতে হবে মিনিট দুবার। দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিন।