।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই অনিয়মের সাথে উপসহকারি পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র দাস জড়িত বলে জানা গেছে। পাট চাষিদের জন্য বরাদ্দকৃত বীজ ও সার কৃষকদের না দিয়ে লাগামহীন দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই কর্মকর্তা।
জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাট বীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পে এ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নের ৩হাজার পাট চাষিদের মাঝে ১কেজি পাট বীজ, ৬কেজি ইউরিয়া, ৩কেজি টিএসপি ও ৩কেজি এমওপি সার বিতরণ করার কথা। কিন্তু এসব উপকরণ বিতরণ না করে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে, এমন তথ্য আসে এ প্রতিবেদকের কাছে। এরপর উপসহকারি পাট কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র দাসের সাথে যোগাযোগ করা হয়। কিন্ত প্রতিবেদককে তথ্য না দিয়ে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন ওই কর্মকর্তা। পরে সুবিধাভোগি পাট চাষির তালিকা চেয়ে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর তথ্য অধিকার ফরমে আবেদন করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাহিদামত তথ্য দিতে গড়িমসি করেন তিনি। এরপর জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা বরাবর আপীল করা হলেও তিনি কোন সাড়া দেননি। গত ১৯ ডিসেম্বর (২০২১ ইং) তথ্য কমিশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে তথ্য দিতে বাধ্য হন এই অসাধু কর্মকর্তা। প্রাপ্ত তালিকার সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালালে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসে।
তালিকার সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভার ২৭৭৬ ক্রমিকে নরেশ চন্দ্র বর্মণের নাম। কিন্ত গত তিন বছর পূর্বে মারা গেছেন তিনি। একই পাড়ার নিবারন চন্দ্র, রতন কুমার, শচীন্দ্র নাথ, দেবেন্দ্র নাথসহ বেশ কিছু ভূমিহীনের তথ্য পাওয়া যায়। এসব ভূমিহীনের নাম উপকারভোগির তালিকায় থাকলেও এসবের কিছু জানেন না তারা, সার তো দূরের কথা কখনও পাটের বিচিকণাও পাননি।
গুনাইগাছ ইউনিয়নের নন্দুনেফরা গ্রামের মতিয়ার রহমান (ক্রমিক নং-২৮৪১) জানান, প্রতিবছর শুধু দিতে চায় কিন্তু একবারো পাইনি। পশ্চিম কালুডাঙা গ্রামের আজিজুল হক কয়েক বছর আগে মারা গেছেন, তবে জীবিত অবস্থায় প্রণোদনার ছিটেফোটাও পাননি । একই গ্রামের হাবিবুর রহমান প্রতি বছর ১৫-২০ শতক জমিতে পাট চাষ করলেও প্রণোদনা পাননা। তালিকায় যে নাম আছে সেটাও জানেননা তিনি। ওই গ্রামের মিলন মিয়া তিন চার বছর আগে পাট চাষ করলেও এখন করেন না। তবে কখনও সার বীজ পাননি।
তবকপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী, হিরোন্দ্র নাথ বর্মন, আবেদ আলীসহ তালিকায় নাম থাকা একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমরা প্রতিবছর পাট চাষ করি। পাট চাষের জন্য সরকার আমাদের জন্য সার বীজ সহায়তা দিলেও এসব কিছুই পাই না। সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয় হলেও আমরা উপকৃত হইনা।
তবে ওই ইউনিয়নের জামিয়ার পাড় গ্রামের ফয়জার রহমান বলেন, প্রতি বছর পাট চাষ করি। তবে কয়েকবছর পূর্বে একবার পাট বড় হওয়ার পর এক কেজি বীজ পেয়েছি। সে সময় ওই বীজ কোন কাজে লাগেনি।
শুধু এরাই নয় তালিকায় তিন হাজার কৃষকের নাম থাকলেও এর বেশির ভাগ কৃষকই এসব প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
সূত্র জানায়, উপসহকারি পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র দাস প্রতিবছর একই তালিকা রদবদল করে পাট চাষিদের জন্য বরাদ্দকৃত বীজ-সার বিতরণ না করে কালো বাজারে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে জনৈক ব্যক্তির বাসার একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে অফিস হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। অফিস চালান অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে। থাকেন নিজ উপজেলা ফুলবাড়িতে, নিয়মিত অফিসেও উপস্থিত হন না তিনি। চলেন নিজের খেয়াল খুশিমত।
এ বিষয়ে উপসহকারি পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র দাস কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে রিপোর্টটি না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
কুড়িগ্রাম পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল সরকার বলেন, মাঠ পর্যায়ে এমন হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যেহেতু আপনি বললেন, আমি খোঁজ নিব। সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/মে/১৫/২২