।। জেলা প্রতিনিধি ।।
কুড়িগ্রামে চৈত্র মাসের শেষের দিকে প্রায় প্রতিদিনেই বয়ে যাচ্ছে ভারি বর্ষণ ধারা। কয়েকদিন ধরে বয়ে যাওয়া ভারি বর্ষণ ও উজানের পানির ঢলে এখানকার ১৬ নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকার চলতি বোরো ধান, পেঁয়াজ, ভুট্টা ও শাকসবজির ক্ষেত পানির নিচে ডুবে যায়। এরমধ্যে চৈত্র মাসে অসময়ে বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে নদ-নদীর তীরবর্তী রাজারহাট, কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর, উলিপুর, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার উঁচু ও চরাঞ্চল গুলোতে বোরো ধান, পিঁয়াজ, ভুট্টা, বাদাম, মরিচ, পটল, ঝিংগাসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে ডুবে গেছে।
কয়েকদিন ধরে এসব ফসল পানির নিচে ডুবে থাকায় শতশত কৃষক ফসল নষ্টের আশঙ্কায় পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে চলতি বোরো ক্ষেত নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন এসব এলাকার কৃসকরা। পানিতে ডুবে থাকা বোরো ক্ষেত পঁচে গলে যাবে এমন আশঙ্কা তাদের।
ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর তীরবর্তী এলাকার কৃষক আবুল কাশেম জানান, আমি এবার ৫ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করি। বোরো ধানের আবাদ খুব সুন্দর হয়। আশা ছিল ফলন ভালো পাবো। কিন্তু চৈত্রের বান আমার ৫ বিঘা জমির সব ফসল ডুবে দেয়। এবার ঘরে বোরো ধান উঠবেনা বলে জানান তিনি।
একই এলাকার কৃষক জাহেদুল হক বলেন, চৈত্র মাসে কাঠফাঁটা রোদ থাকে। কিন্তু এবার চৈত্র মাসে বর্ষকাল আমাদের চরম ক্ষতি করলো। তার বোরো ধানের ক্ষেত পানির নিচে ডুবে নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধান গাছগুলো পানির নিচে ডুবে থাকায় সেগুরো পঁচে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। বেরো ধানের সাথে চরাঞ্চলে চাষকৃত পিঁয়াজ, ভুট্টা, বাদাম, মরিচ, পটল, ঝিংগাসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে থাকায় তা নষ্ট হয়েছে। রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তিস্তার চরের কৃষক আফজাল হোসেন জানান, তার ৩ বিঘা জমিতে পিঁয়াজের আবাদ করেছি। কিন্তু বৃষ্টি ও উজানের ঢলে চরের জমিতে পানি ঢুকে সব নষ্ট হয়ে গেছে।
চিলমারী উপজেলার অষ্টমীর চরের কৃষক আবু বকর সিদ্দিক জানান, চরের জমিতে মরিচ, ঝিংঙা চাষ করেছে। সব অসময়ের পানিতে তলিয়ে শেষ হয়ে গেছে। অন্যান্য বছর এসময় পানি না আসলেও এবার এসে সব শেষ করে দিল।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের ধরলার পাড়ের কৃষক ইয়াকুব আলী জানান, নদীর পলিতে প্রায় এক একর পরিমানে জমিতে বোর লাগিয়েছিলাম। সব তলিয়ে গেছে। সামান্য কিছু কেটে আনতে পেরেছি। বাকী সব পানির নিচে।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর খামারবাড়ীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সরকার রাজু জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে চৈত্র মাসে কুড়িগ্রামে অবিরাম বর্ষণ ধারা বয়ে যাচ্ছে। এটি একটি বিরল ঘটনা। এমন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে কুড়িগ্রামে ৯ টা উপজেলায় নিম্নাঞ্চলের ৭৭৫ হেক্টর জমির বোরো, বিভিন্ন ফসল পানির নিচে নিম্মজ্জিত হয়। এরমধ্যে ৪৫০ হেক্টর জমির চলতি বোরো ধান ক্ষেত নিম্মজ্জিত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, চৈত্রের বর্ষণ ধারায় কুড়িগ্রামের ৯ টি উপজেলার নদ-নদী তীরবর্তী এলাকার বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলী জমিতে পানি ওঠে। এরমধ্যে চরাঞ্চলের প্রায় ৬০০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে পানি ঢুকে পড়েছে। উজানের পানি আসা কমে গেলে ও আভ্যন্তরিন বৃষ্টিপাত কমে গেলে ক্ষতির পরিমান কিছুটা কমতে পারে বল জানান তিনি।
//নিউজ/কুড়িগ্রাম//সুভাষ/এপ্রিল/১৫/২২