।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও পাম্প বিকল হয়ে পানি সরবরাহ অনিয়মিত হওয়ায় পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বাসাবাড়ি, হোটেল রেস্তোরাঁসহ সর্বত্র বেড়েছে জন দূর্ভোগ।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার নাগরিক সুবিধা বাড়াতে কুড়িগ্রামের কলেজ মোড়ে ও হরিকেশ এলাকায় ১৯৮৬ সালে দুটি আধুনিক ওভারহেড ট্যাংকসহ পানি শোধনাগার স্থাপন করা হয়। জাপান সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় শোধনাগার দুটি স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে পুরাতন শহরের উত্তর-পূর্ব দিকের জন্য হরিকেশ পানি শোধনাগার ও দক্ষিণ-পূর্বদিকসহ নতুন শহরের পানি সরবরাহের জন্য কলেজ মোড়ে শোধনাগার নির্মিত হয়। এরপর ২০১৮সালে কলেজমোড়ে আরো ১টি ল্যান্ড রিজার্ভ কম্প্রেসার ট্যাংকসহ পানি শোধনাগার স্থাপন করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। শোধনাগারগুলোর অধীন প্রায় ৪০ কি.মি পানি সরবরাহ লাইনে ২৬০০টি পানির বৈধ সংযোগ রয়েছে। এসব সংযোগ গ্রাহকদের বিভিন্ন হারে পানির বিল পরিশোধ করতে হয়। এর বাইরে বাজার বা বস্তি এলাকায় বিনা টাকায় পানি সুবিধা দিয়ে উন্মুক্ত পানির ট্যাপ রয়েছে ২০টি। কলেজ মোড়ের ২টি শোধনাগার থেকেই পুরাতন ও নতুন শহর পানি সরবরাহ লাইন সংগোগ রয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থাপনা মতে ওভারহেড ট্যাংকের পানি পুরাতন শহর ও নতুন ল্যান্ড কম্প্রেসার ট্যাংক থেকে নতুন শহরে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। কলেজ মোড়ের পুরাতন ওভারহেড ট্যাংক থেকে প্রতিদিন ২ বেলা গড়ে ৫ লাখ গ্যালন পানি ও নতুন ল্যান্ড কম্প্রেসার ট্যাংক থেকে প্রতিদিন ২ বেলা গড়ে ৮ লাখ গ্যালন পানি গ্রাহকদের সরবরাহ করা হয়।
বর্তমানে হরিকেশ শোধনাগার পূর্ণাঙ্গ সচল থাকলেও কলেজ মোড়ের শোধনাগার দুটির বিভিন্ন মেশিনারি যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। পুরাতন ওভারহেড পানির ট্যাংক চালাতে নতুন ২টি আধুনিক পাম্প সংযোগ করা হয়েছে। কিন্তু এ পাম্প দুটি ৩৭৫ ভোল্টেজে চালু হয় এবং ৪০০ ভোল্টেজের বেশি হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এ দুটি নতুন পাম্পেও কাঙ্খিত ভোল্টেজ না পাওয়ায় পুরোপুরি পানি শোধন করা যাচ্ছে না। তাই ২ বেলা পানি সরবরাহ না করার পরিবর্তে একবেলা পানি সরবরাহ করা হয়। সেটিও সঠিক সময়ে চাহিদানুযায়ী করা যাচ্ছে না। পানির অনিয়মিত সরবরাহের কারণে পৌরবাসীদের প্রতিদিনই পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
হাটিরপাড় এলাকার বেসরকারী চাকুরিজীবী হাফিজুর রহমান জানান, পানি সংকটের কারণে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যহত হচ্ছে। দূর দূরান্ত থেকে টিউবওয়েলের পানি সংগ্রহ করতে অতিরিক্ত কষ্ট হচ্ছে ও সময় ব্যয় হচ্ছে। পরিবারের সদস্যরা স্কুল-কলেজে, অফিস-প্রতিষ্ঠানে সময়মতো যেতে পারছে না। ভোগান্তির সপ্তাহ পেরিয়ে গেল কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
খলিলগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল মমিন বলেন, নিয়মিত পৌরকর, পানির বিল পরিশোধ করছি। কিন্তু পানির কষ্টে বর্তমান জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। পৌরসভায় গিয়ে জেনেছি পাম্প নষ্ট, ভাল হলে পানি সরবরাহ করা হবে। কবে যে এ থেকে নিস্তার পাব জানিনা।
সূত্র মতে, গত সাত দিন আগে কলেজ মোড়স্থ শোধনাগারের জন্য ব্যবহৃত পৌরসভার নিজস্ব একটি ট্রান্সফরমার ও ৩টি পানির পাম্প বিকল হয়ে পড়ে আছে। ভোল্টেজ আপ-ডাউনের কারণে বারবার এ ধরণের সমস্যা হচ্ছে। একটি পাম্প রিপিয়ারিং কাজ আজই শেষ হবে। বাকি ২টির কাজ চলবে। তবে ট্রান্সফরমারটি রিপিয়ারিং কাজ এখনো শুরু হয় নি। কাঙ্খিত ভোল্টেজ পাওয়া গেলে নতুন পাম্পগুলোর মাধ্যমে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে। পাম্প নষ্ট হওয়া বন্ধ করতে প্রতিটি পাম্পের জন্য দরকার আলাদা আলাদা পাওয়ার ব্যাংক। যা স্থাপন করা জরুরি হলেও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় নি।
কলেজ মোড়ের পানি শোধনাগারের দায়িত্বরত পাম্প অপারেটর আমজাদ হোসেন সাজু বলেন, পানি শোধনের অন্যতম যন্ত্র পাম্প। এর চাহিদানুযায়ী বৈদ্যুতিক ভোল্টেজ পাওয়া গেলে সবগুলো পাম্প সচল থাকবে। তখন এমন সমস্যা থাকবে না।
পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত পানি পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। আজ একটি পাম্প মেরামত করে চালু করা হয়েছে। বাকিগুলোর মেরামত কাজ চলমান। অন্যান্য সমস্যা নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ নেসকো কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছেন।
নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)-কুড়িগ্রাম এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আলিমুল ইসলাম সেলিম জানান, কুড়িগ্রাম পৌরসভার নিজস্ব ট্রান্সফরমারসহ যন্ত্রপাতি বিকল হয়েছে যা তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। কুড়িগ্রামে বর্তমানে লো ভোল্টেজ নেই। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ চাহিদা দিলে তাদের ওই এলাকায় প্রয়োজনীয় ভোল্টেজ বাড়ানো যাবে। কুড়িগ্রামে নিবরচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিতে আমরা কাজ করছি।
পৌর মেয়র মো: কাজিউল ইসলাম জানান, পানি নিয়ে সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে কথা চলছে। চেষ্টা করছি একটি আধুনিক পৌরসভা গড়ার। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। পৌরবাসীকে সময়মতো কর প্রদান করতে হবে। পানির বিল পরিশোধ করতে হবে। তাদের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। সেগুলোর অনুমোদন পেলে পৌরবাসীর সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।