।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে ইট ভাটার পেটে নিরাশির বিল। পানি না থাকায় বিলে এখন বোরোর চাষ হচ্ছে। বিলুপ্ত হয়ে গেছে দেশি প্রজাতির মাছ। প্রবাদ আছে “খাল বিল নদী নালায় ভরপুর তার নাম উলিপুর”। সেই উলিপুর এখন খাল বিল শূন্য হয়ে পড়েছে। খাল বিল জলাধার নীতি মালার আওতায় সংরক্ষনের আইন থাকলেও বিল ভরাট করে ইট ভাটা স্থাপন করা হচ্ছে। উপজেলা ভূমি অফিসের জরিপ অনুযায়ী উপজেলায় মোট ৩০টি ইট ভাটা রয়েছে। এরমধ্যে চালু আছে ২০টি বাকি ১০টি বন্ধ রয়েছে।
ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন জানান, মাত্র ৩টি ইট ভাটার বৈধ কাগজ রয়েছে অন্য গুলো এমনিতে চলছে।
কুড়িগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রেজাউল করমি জানান, জনবল সংকটের কারণে যথাযথ মনিটরিং করা যায় না।
স্থানীয়রা জানায়, তবকপুর এলাকায় প্রায় দুইশত একর জমি নিয়ে উপজেলার নিরাশির বিলটিতে সারা বছর পানি থাকত। বিলের মাঝ খানে ছিল ১৫/২০টি পুকুর। এ বিলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে রসুলপুর নালা। যা ব্রম্মপুত্র নদের সাথে সংযোগ ছিল। ফলে বিলটিতে নদীর মাছ ও দেশী মাছে ভরপুর থাকত। সেই মাছ ধরে এলাকার অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত। রুই, কাতলা, মৃগেল, আইর, চিতল, শোল, গজার, বোয়াল, কই, ষাটি, মাগুর, শিং, ভেদা, গছি, পুইয়া, খলিসা, পুটি, মলাা সহ দেশী ও নদীর নানান জাতের ছোট মাছ পাওয়া যেত।
চুনিয়ার পাড় গ্রামের বাসিন্দা কাজী মোঃ শফিউল আলম (৬৫) জানান, উলিপুর-চিলমারী সড়কের পাশে অবস্থিত নালাটি ভড়াটের ফলে পানি প্রবাহ কমে যায় এবং ২০১০ সালে কয়েকজন ইট ব্যবসায়ী বিলের জমি নাম মুল্যে কিনে বিল ইট ভাটা স্থাপন করে। এভাবে একে একে ৬টি ভাটা স্থাপন করলে বিলের সিংহ ভাগ জমি ভাটার পেটে চলে যায়। ফলে বিলটি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে।
খরকু দাস (৬৭) জানান, আগোত সারা বছর এই বিলে মাছ ধরে জীবন বাঁচাইছি অহন বিলে পানি থাহে না, মাছও থাহে না। তাই হামার খুব কষ্ট হইছে। এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম (৫৬) বকুল মিয়া (৬০), আজাদুল ইসলাম(৪০) জানান, ভাটা হওয়ার পর বিলে পানি থাকে না। মাছও তেমন পাওয়া যায় না। তাই এখন আমরা জমিতে বোরোর চাষ করছি। ভাটার ধোঁয়ায় সে আবাদও ভাল হয় না। আশ পাশের আম, জাম, কাঠাল, লিচু, সুপারি, নারিকেল গাছসহ অন্যান্য গাছ পালায় এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় সরকারি খাস বিল সহ ব্যক্তি মালিকানাধিন ছোট বড় ৪৪ টি খাল বিল রয়েছে। তার মধ্যে সরকারি ৪টি ও ব্যক্তি মালিকাধিন ৪০টি। নদ-নদী ছাড়াও খাল বিল মাছের উৎপাদন ও সরবরাহে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখত। নদী গুলো বিলুপ্ত হওয়ায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হলে খাল বিল গুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। তার উপর বেআইনী ভাবে বিল গুলোতে গড়ে উঠছে ইট ভাটা।
এইচ বি ইউ ইট ভাটার মালিক আব্দুল হামিদ জানান, বিলের জমি কিনে যথায়থ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ভাটা করেছি। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা গ্রীণ ভয়েস এর জেলা সভাপতি নোমান খান জানান পরিবেশ নীতিমালা অনুযায়ী বিল, কৃষি জমি ও আবাসিক এলাকায় ভাটা করা যায় না। কিন্তু এখানে তা মানা হচ্ছে না। একারণে পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ তারিফুর রহমান জানান, বিল ইট ভাটা হলে তা দেখার দায়িত্ব জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের। তারপরেও বিলের অস্তিত্ব রক্ষায় জরিপ কাজ চলমান রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার জানান, বিলে ভাটা কি ভাবে হয়েছে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/মার্চ/২২/২২