।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ পল্লী সমবায়ীদের মাঝে পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি (বিআরডিবির) ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এই অনিয়মের সাথে সরাসরি উপজেলা বিআরডিবি অফিসার শাহিন মিয়া জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আপন বোন ও নিজস্ব লোককে ঋণের টাকা দিয়েছেন। এতে করে বঞ্চিত হয়েছে প্রকৃত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাগণ। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের উপ পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
জানা গেছে, মহামারী করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষুদ্র উদোক্তা ও বিআরডিবি সমিতির ক্ষতিগ্রস্থ সদস্যদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এ উপজেলায় প্রায় ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী সুবিধাভোগি বাছাইয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করার কথা। এছাড়াও ঋণ বিতরণে আর্থ সামাজিক জরিপ, সদস্য বাছাই ও এলাকা বিন্যাসে বেশ কিছু নিয়ম কানুন থাকলেও তার কিছুই মানা হয়নি।
ভুক্তভোগিদের তালিকার সূত্র ধরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শহরের জোদ্দার পাড়া এলাকার বীনা রাণি পেয়েছেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নিয়ম অনুযায়ী একজন সুবিধাভোগির বসতবাড়িসহ কমপক্ষে ৫০ শতক জমির মালিক হলে তিনি ঋণ পাওয়ার কথা। কিন্তু বীনা রাণির ক্ষেত্রে এসব মানা হয়নি। বীনা রাণি জানান, করোনায় দইয়ের ব্যবসায় লোকসান হয়েছে তাই ঋণ নিয়েছি।
নিয়মবহির্ভূতভাবে দুই লাখ টাকার ঋণ পেয়েছেন ওই কর্মকর্তার আপন বোন মজিদা বেগম। তিনি বিআরডিবির সমিতিতেও নেই। ভাই কর্মকর্তা হওয়ার সুবাধে এই টাকা পেয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে মজিদা বেগম বলেন, কিভাবে ঋণ পেয়েছি জানিনা। ভাই (কর্মকর্তা শাহিন মিয়া) সব জানে। তবে তিনি কোন সমবায়ী কিংবা উদ্যোক্তা নন।
এছাড়াও পূর্বে একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে ২ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছে পৌর শহরের শাখাওয়াত হোসেন নামের এক ব্যক্তি। শাখাওয়াত হোসেন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। তার স্ত্রীও সরকারি প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা বলে জানা গেছে। একইভাবে ঋণ পেয়েছেন জুম্মাহাট কেবলকৃষ্ণ গ্রামের সুজন মিয়া।
ঋণ বিতরণের নানা অনিয়মের অভিযোগ করেন নূর মোহাম্মদ সরকার নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। উৎকোচের বিনিময় সমবায়ী ছাড়া বন্ধুবান্ধব,আত্মীয়, সরকারি চাকুরি জীবিকে ঋণ দিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন ওই মুক্তিযোদ্ধা। অভিযোগের প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও কার্যকরি কোন পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তবে একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, বিআরডিবি সদর দপ্তরে শাহিন মিয়ার (উপজেলা কর্মকর্তা) বড় ভাই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় ব্যাপক প্রভাব রয়েছে তার।
উলিপুর কেন্দ্রিয় সমবায় সমিতির ১নং পরিচালক মাসুম করিম বলেন, প্রণোদনার যে লোন বিআরডিবিতে এসেছে এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা। যাদেরকে ঋণ দেয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগই সমবায়ী নয়। ওই কর্মকর্তার কাছের লোক হওয়ায় তাদেরকে ঋণ দিয়ে নতুন করে সদস্য করেছে। উনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না, কারণ ওই কর্মকর্তার ভাই হেড অফিসের (বিআরডিবি) বড় কর্মকর্তা।
মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ সরকার বলেন, আমরা কি এসব দূর্নীতিবাজদের জন্য জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছি। গত এক মাস আগে অনিয়মের অভিযোগ করেছি, কিন্ত এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
উলিপুর কেন্দ্রিয় সমবায় সমিতির সভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বলেন, শুনেছি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের গ্রুপ ভিত্তিক ঋণ দেয়ার কথা। কিন্তু বিআরডিবি কর্মকর্তা শাহিন মিয়া একক ক্ষমতা বলে প্রকৃত উদোক্তাদের বাদ দিয়ে কোথায় কাকে ঋণ দিয়েছেন এসব আমরা কিছুই জানিনা। তবে ঋণ বিতরণে অনিয়মের কথা শুনেছি। অনেকে অভিযোগও করেছেন, সে বিষয়ে আমরা খতিয়ে দেখছি।
জানতে চাইলে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিআরডিবির (উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি) অফিসার শাহিন মিয়া বলেন, ঋণ বিতরণে কোন অনিয়ম হয়নি। স্বচ্ছতার সহিত বিতরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিআরডিবির উপ পরিচালক নুর হোসেন মিয়া বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
//নিউজ/উলিপুর//মালেক/মার্চ/১৬/২২