।। জেলা প্রতিনিধি ।।
কুড়িগ্রামের বিভিন্ন চরাঞ্চলের বালুচরে কুমড়া চাষে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এতে পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন ভূমিহীন কৃষকরা। পুষ্টির যোগান দেবার পাশাপাশি এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে এ ধরণের উদ্যোগ।
জেলা জুড়ে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমোর ও গঙ্গাধরসহ ১৬ নদ-নদীর বুক জুড়ে এখন শুধুই বিস্তৃত বালু চর। এসব বালু চরে তেমন কোন ফসল ফলানো যায় না। কিন্তু এবার করোনাকালীন সময়ে এসব চরে ভূমিহীন কৃষকরা অব্যবহৃত বালু চরকে ব্যবহার উপযোগী করে ফলাচ্ছেন ফসল। তারা বালু মাটিতে বিপুল পরিমাণ কুমড়া চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। বালু চরে কুমড়া চাষ করতে কৃষি বিভাগসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ভূমিহীন কৃষকদের টেকনিক্যাল সার্পোট ও বীজ দিয়ে সহায়তা দিলেও অধিকাংশ কৃষক নিজ উদ্যোগে এসব বালুচরে কুমড়া চাষ করছেন।
কুড়িগ্রামের কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে কুমড়া চাষ করা হয়েছে। কুমড়া চাষ করা এসব জমির বেশির ভাগই বালুচর। নাগশ্বেরী উপজলোর দুধকুমার নদীর চরে কৃষক সাফিয়ার রহমান বলেন, গত ৩ বছর ধরে নিজ উদ্যোগে বালু চরে কুমড়া চাষ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে তিনি প্রতি বছরে কুমড়া বিক্রি করে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করছেন। তিনি বলেন, আমি নিজে পরিশ্রম করে বালু চরে কুমড়া চাষ করছি। সঠিকভাবে যতœ নিলে বালুচরে খুবই ভালো কুমড়া চাষ করা যায়।
কুড়িগ্রাম সদর উপজলোর ব্রহ্মপুত্র নদের ঝুনকার চররে ভূমিহীন কৃষক নবিদুল ইসলাম বলেন, চরে বসবাসকারী ১৫জন ভূমিহীন কৃষক একত্রিত হয়ে তারা ৭ হেক্টর জমিতে কুমড়া চাষ করছেন। আশা করছি আল্লাহর রহমতে প্রত্যেক কৃষক এ বছর কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা করে লাভ পাবেন। আমরা একটি এনজিও থেকে বীজ সহায়তা পেয়েছি। কৃিষবিভাগ থেকে নিয়মিত সহায়তা পাচ্ছি।
চিলমারী উপজলোর ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে অষ্টমীর চর এলাকার ভূমিহীন কৃষক শেখের আলী বলেন, বালু চরে কুমড়া চাষ করে ভালোই লাভবান হচ্ছি। ওই চরে বসবাসকারী অনেক কৃষক এখন কুমড়া চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। বালু চরে কুমড়ার চাষে ফলন ভালোই পাওয়া যায়। ‘একই চরের বিধবা ছমিরন বেওয়া জানান, গত বছর দুই বিঘা জমিতে কুমড়া চাষ করে ভালোই লাভবান হয়েছি। তাই এবার তিনি ৩ বিঘা জমিতে কুমড়া লাগিয়েছেন।
কুড়িগ্রাম কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, চরের কৃষকরা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কুমড়া চারা লাগান। মার্চ মাস হতেই তারা ফলন পেতে শুরু করেন। এসব চরের উৎপাদিত কুমড়া দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নিয়ে যান। বালু চরের কুমড়া চাষি ভূমিহীন কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও টেকনিক্যাল সার্পোট দেয়া হচ্ছে।