।। নিউজ ডেস্ক ।।
ভূরুঙ্গমারীতে জাতীয় পরিচয় পত্রে সন্তানের থেকে মুক্তিযোদ্ধা বাবার বয়স কম হবার ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ প্রায় দু’বছর ধরে। পরিবারের সদস্যদের দাবী জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সুরাহা না পেয়ে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যান ৯৪ বয়সী মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী। তারাও ভাতা বঞ্চিত আছেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলার চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ধুলার কুটি গ্রামের মৃতঃ বাবন শেখের পুত্র মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহণ করেন ৪৩বছর বয়সে। সেই সময় তিনি বিবাহিত ছিলেন। তার ৫ছেলে ও ২মেয়ে সন্তানের মধ্যে যুদ্ধের আগে তিন সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা ১৭ নং বই ৪০১৪৭ ক্রমিক, লাল মুক্তিবার্তায়-৩১৬০৪০৫২০ ক্রমিক এবং ২০০৫সালের ২১ মে বেসামরিক গেজেট ৩৭৯১ পৃষ্ঠায় গেজেট ১০৬৪ নং এ তার নাম রয়েছে। তিনি ২০০৮সালের ১অক্টোবর হতে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসছিলেন। ২০২০সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য অনলাইনে পূরণ করতে গিয়ে তিনি জন্ম তারিখের ত্রুটির কারণে ভাতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। জন্ম সনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৯২৮সালের ১১ আগষ্ট। কিন্তু ২০০৮সালে জাতীয় পরিচয় পত্রে তার বয়স দেখানো হয়েছে ১৯৭১সালের ১০মে। অথচ তার বড় ছেলে আমির হোসেনকে তার থেকে বড় দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ বাবার থেকে ছেলে বড়। জাতীয় পরিচয়পত্রে বড় ছেলে আমির হোসেনের বয়স দেখানো হয় ১৯৬০সালের ২মার্চ। জাতীয় পরিচয় পত্রের এমন ত্রুটির কারণে প্রায় দু’বছর থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ রয়েছে। জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য নির্বাচন অফিসসহ বিভিন্ন বিভাগের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন লাভ হয়নি আকবর আলীর সন্তানদের। জন্ম তারিখ সংশোধন হবার পূর্বেই বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী গত ৪ ফ্রেব্রুয়ারি মারা যান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা হযরত আলী বলেন, আমিসহ আকবর আলী, লস্কর আলী জ্যাঠাতো ভাই। তিনজনই যুদ্ধ করেছি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়েছি। কিন্তু হঠাৎ ভোটার আইডির সমস্যা হওয়ায় আকবর আলীর ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর স্ত্রী সুফিয়া বেওয়া বলেন, ‘ভাতা বন্ধ হবার পর থেকে উনি অসুস্থ হইয়া পড়েন। তার চিকিৎসাটাও ঠিকমত করতে পারলাম না। অসুস্থতার কারণে উনি মইরাই গেলেন। আমরা অফিস-আদালতে অনেক দৌঁড়াইছি। কেউ সারা দেয় নাইক্যা।’
বড় ছেলে আমির হোসেন বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র করার সময় বাবার বয়স দিছে ১৯৭১সাল। আমাদের ভাই-বোনদের অনেকের জন্মসাল লিইখা দিছে ১৯৫০ ও ১৯৬০। এই জন্ম তারিখ ঠিক করার জন্য যেখানেই গেছি খালি ট্যাহা-ট্যাহা করে। তাও আমগো বাবার জন্ম তারিখ ঠিক হয়নি। আমরা ব্যর্থ হয়া গেছি গা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর নাতি রঞ্জু বলেন, ২০০৮সালে আমার দাদী-দাদা এনআইডি করতে যায়। সেখানে তাদের বয়স ভুল তোলা হয়েছে। তারা তো মুখ্যসুখ্য মানুষ। বয়স কি এগুলা বোঝে না। দাদার বয়স ঠিক করতে আমরা ঢাকা গেছি। সেখানে বলা হয় আমরা পারবো না এটা রংপুর থেকে ঠিক করবে। রংপুরে গেছি সেখানে আমাদের পাত্তাই পায় না। বহু টাকা পয়সা খরচ করেও কোন লাভ হয়নি। দাদা মারাই গেল। তবু ভাতা চালু হয়নি আজও। এখন অন্যের ভুলের খেসারত আমাদেরকে দিতে হচ্ছে।
সাবেক ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার জামাল উদ্দিন বলেন, মরহুম আকবর আলী প্রকৃত একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার বয়স ঠিক করার জন্য আমরা বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেন হইল না তার সঠিক কারণ আমরা জানি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবী সঠিক তদন্ত করে মৃত আকবর আলীর ভাতা পুনরায় চালু করে দিতে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
এই বিষয়ে জেলা নির্বাচন অফিসার জাহাঙ্গীর আলম রাকিব বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদনটি বিবেচনা করে “গ” ক্যাটাগরি অন্তর্ভুক্ত। ইতোমধ্যে এই আবেদনটি নিষ্পত্তি করার জন্য প্রয়োজনীয় তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন সাবমিট করা হয়েছে।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন বলেন, আমি ঢাকায় মিটিং শেষ করে রংপুর ফিরছি। বিষয়টি আমার নজরে আসল। আমি যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করার আশ্বাস দেন।