।। লাইফস্টাইল ডেস্ক ।।
সাম্প্রতিক কালে দেখা যাচ্ছে অনেক কমবয়সির মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে হৃদরোগ। ২০ থেকে শুরু করে ৪০ এর বেশি, সব বয়সীরাই হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হল শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক ও এর মৃত্যু ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তথ্য থেকে জানা যায়, প্রতিবার শীতকালে হার্ট অ্যাটাকের রোগী ৩০% থেকে ৫০% বৃদ্ধি পায়।
অনিয়মিত জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে শীত এলেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের যোগসূত্র কোথায়?
বহু সমীক্ষায় দেখা গেছে শীতে হার্ট অ্যাটাক ছাড়াও হার্টের অন্যান্য সমস্যাসহ স্ট্রোকেও আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। এর কারণ হলো শীতে আমাদের শরীরে স্নায়ুব্যবস্থার ‘সিমপ্যাথেটিক অ্যাক্টিভেশন’ বেড়ে যায়। তাই রক্তনালী সঙ্কুচিত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে ‘ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন’।
শীতের প্রভাবে রক্ত উপাদানে অনেক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। রক্ত জমাট বাঁধার জন্য দায়ী রক্তকনিকা, প্লাটিলেট, লোহিত কনিকা, ফিব্রিনোজেন এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় শতকরা ২০ ভাগ পর্যন্ত। রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের প্রবণতা অনেক গুণে বৃদ্ধি পায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি শীতের প্রকোপে হার্টের অনিয়মিত হৃদস্পন্দন শুরু হতে পারে যার ফলে তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটাও অস্বভাবিক নয়। পেট ভরে খেয়ে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় হাঁটাহাঁটি করলে খুব সহজেই এনজিনার ব্যথা শুরু হয়ে যায়, যার জন্য রক্তনালির সংকোচনকেই দায়ী করা হয়। যারা সুস্থ-সবল লোকজন তারা খুব সহজে ঠাণ্ডাজনিত এসব পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, কিন্তু যারা শারীরিকভাবে দুর্বল, বয়সের ভারে ন্যুব্জ বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত তারা খুব সহজেই এসব পরির্বতনের ফলে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে থাকেন। এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার জন্য আপনার প্রস্তুতি এবং সতর্কতা আপনাকে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।
সতর্কতা ও করণীয়
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হৃদরোগীরা নিয়মিত ওষুধ সেবন করবেন।
- শীতের শুরুতে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণ করে ওষুধপত্রের মাত্রা ঠিক করে নিন।
- ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় বাইরে যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং কাপড় সঙ্গে রাখুন।
- বাইরে হাঁটাহাঁটি করতে যাওয়ার সময় গরম কাপড়, জুতা, ছাতা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে নিয়ে বের হবেন।
- বয়স্ক হৃদরোগীরা প্রতিদিন গোসল না করে একদিন পর পর হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন। মনে রাখবেন, খুব বেশি গরম পানি দিয়ে গোসল আপনার স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
- পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পরিমাণ বিশেষ করে শর্করা জাতীয় খাবার ১৫% থেকে ২০% বৃদ্ধি করা উচিত। বয়স্ক হৃদরোগীর শীতকালীন বৃষ্টির সময় ঘরের বাইরে না যাওয়াই উত্তম।
- নিয়মিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে রাখুন যাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন।