।। লাইফস্টাইল ডেস্ক ।।
নিজের থেকে খাবার গ্রহণের সুযোগ পাওয়ার আগে বা নির্দেশ বোঝার আগেই শিশুর মুখে খাবার ঢুকিয়ে দেওয়া হলে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। নবজাতক থেকে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত প্রায় ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ শিশুকে খাওয়ানো নিয়ে ঝামেলা থাকে। আর যেসব শিশু মানসিক বিকাশে পিছিয়ে থাকে, তাদের মধ্যে এ হার প্রায় ৮০ শতাংশের মতো। শিশুকে জোর করে খাওয়ানোয় ভয়াবহ পরিণতি তৈরি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এসব শিশুর বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে সমস্যা হয়, কখনো বা তারা ওজন হারাতে থাকে।
তবে জোর করে শিশুকে খাওয়ানো ঠিক নয়। একথা জানলেও মানতে চান না অভিভাবকেরা। আর এ কারণেই অজান্তেই শিশুর ক্ষতি ডেকে আনেন। জেনে নিন শিশুকে জোর করে খাওয়ালে যে ৮ ক্ষতি হতে পারে সম্পর্কে-
১. শিশুকে জোর করে খাবার খাওয়ালে তারা ভালো করে না চিবিয়েই গিলে খায়। ফলে এই খাবার তাদের শরীরে কাজে লাগে না। আর আস্ত খাবার গিলে খেতে গিয়ে শিশু বমি করে দেয়।
২. দীর্ঘদিন ধরে শিশুকে জোর করে খাবার খাওয়ালে তাদের হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। খাবার গিলে খাওয়ায় তাদের পাচনতন্ত্রকে অধিক পরিশ্রম করতে হয়। এর ফলে পাচন তন্ত্র ভালোভাবে কাজ করতে পারে না।
৩. জোর করে খাবার খাওয়ালে শিশু প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে। জোর করে বেশি বেশি খাবার খাওয়ায় খাবারের একটি বড় অংশ ফ্যাট হিসেবে শরীরে জমে যায়। যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
৪. গলায় খাবার আটকে গিয়ে শিশুর মারাত্মক বিপদ হতে পারে। ছোটদের মুখে জোর করে খাবার দিলে তারা ঠুসে দিলে তারা কাঁদতে শুরু করে। তখন গলায় খাবার আটকে দম বন্ধ হয়ে আসতে পারে ও খাবার গিলতেও সমস্যা দেখা দেবে।
৫. নিয়মিত জোর করে শিশুকে খাওয়ালে তার গিলে খাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আর খাবার চিবিয়ে না খেলে তা শরীরে লাগে না। প্রতিদিন এমন চলতে থাকলে শিশুরা চিবিয়ে খাবার খেতে শিখবে না। যা তার শরীরের জন্য ক্ষতি ডেকে আনবে।
৬. শিশুদেরও গ্যাসের সমস্যা হয়। বিশেষ করে ঠুসে খাবার খাওয়ানো হলে বাচ্চাদের মুখ দিয়ে অতিরিক্ত বাতাস ঢুকে পেটে। অন্য দিকে গিলে খাবার খেলে তা হজমে দেরি হয়। ফলে পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। এই গ্যাসই শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ।
৭. যেসব শিশুকে ছোটবেলা থেকেই জোর করে বেশি খাবার খাওয়ানো হয়। তাদের ওভার ইটিংয়ের অভ্যাস গড়ে ওঠে। কত পরিমাণ খাবার খাওয়া উচিত, তা তারা বুঝতে পারে না। তাই বড় হলেও নিজে থেকেই বেশি বেশি খেতে শুরু করে।
৮. জোর করে খাওয়ানোর ফলে শিশুরা খাবারের স্বাদ বুঝে উঠতে পারে না। আর স্বাদ বুঝতে পারে না বলেই তারা খাবার মুখে তুলতে চায় না। তাদের মধ্যে খাবারের প্রতি অনীহা গড়ে ওঠে।
যেভাবে খাওয়াবেন শিশুকে-
১. শিশুকে জোর করে খাবার খাওয়াবেন না। খেতে না চাইলে ভয় দেখাবেন না, বরং বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বোঝানোর চেষ্টা করুন।
২. প্রতিদিন একই খাবার খাওয়াবেন না শিশুকে। দৈনিক তাদের মেন্যু পরিবর্তন করুন।
৩. শিশুর কালারফুল খাবার খেতে পছন্দ করে। এজন্য তাদেরকে রং-বেরঙের শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়ান। তাও আবার ভালোভাবে পরিবেশনের মাধ্যমে। দেখবেন স্বাভাবিকভাবেই তাদের খাবারের ইচ্ছে বাড়বে।
৪. একবারে অতিরিক্ত খাবার না দিয়ে শিশুকে অল্প অল্প করে ববারবার খাওয়ান। এর ফলে শিশুর খাওয়ার প্রতি আগ্রহও বাড়বে আর সহজে হজমও করতে পারবে।
৫. খাবারের পাশাপাশি শিশুকে পর্যাপ্ত পানি পান করান।