।। টেক ডেস্ক ।।
প্রতি বছরই নতুন কিছু প্রযুক্তি যুক্ত হয় আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে। কখনো আবার পুরানো ট্রেন্ডেরই পুনরাবৃত্তি ঘটে নতুন বছরে। সাম্প্রতিক সময়ে কভিড-১৯ মহামারীর কারণে প্রযুক্তিতেও ভিন্নতা ও নতুনত্ব এসেছে। একই রকম অনেকগুলি “প্রবণতা” বারবার প্রদর্শিত হয়। ২০২২ সালে যেসব প্রযুক্তি সাধারণের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে, তার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
মেটাভার্সঃ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে, প্রযুক্তিবিদরা এমন একটি যুগের স্বপ্ন দেখেছেন যেখানে আমাদের ভার্চুয়াল জীবন আমাদের শারীরিক বাস্তবতার মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সহজ ভাষায়, নিকটজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ভার্চুয়াল জগতের শরণাপন্ন হবে মানুষ। তাত্ত্বিকভাবে, মানুষের ডিজিটাল অবতারের জন্য পোশাক ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে আর্থিক লেনদেন হবে, এমনটাই আশা প্রযুক্তিবিদদের। এ ধারণাটিকেই মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গ ‘মেটাভার্স’ বলে অভিহিত করেছেন।
গত বছর প্রতিষ্ঠানটির এক কোটি ইউনিট ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট বিক্রি হয়। এ মাইলফলক অর্জন করায় সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে প্রতিষ্ঠানের নাম বদল করে ‘মেটা’ করা হয়। মেটাভার্স বলতে শুধু মেটাধীন মাধ্যমগুলোকে বোঝায় না; বরং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এক অপার্থিব জগেকই নির্দেশ করে। এর মধ্যে রয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রচলন, অ্যাপলের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট তৈরির পরিকল্পনাও। এছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরেই গুগল নিজস্ব ভার্চুয়াল রিয়েলিটির হেডসেট উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া করছে। চোখে বিশেষ চশমা ও মাথায় হেডসেট পরে নিমেষেই এক অপার্থিব ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জগতে প্রবেশ করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।
স্মার্ট হোমঃ বিগত বছরে ইন্টানেট সংযুক্ত থার্মোস্ট্যাট, দরজার লক ও রোবোটিক ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মত স্মার্ট হোম পণ্যগুলি বেশ উন্নত হয়েছে। অ্যামাজনের আলেক্সা, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও অ্যাপলের সিরি এর মত ই-কমার্স গুলো এক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছে। যদিও স্মার্ট হোম পণ্যগুলো অধিকাংশ ডিভাইসের প্রযুক্তিতে কাজ না করারও তথ্য মিলেছে। কিছু কিছু দর্জার স্মার্ট লক শুধু অ্যাপলের ফোনেই কাজ করে। সুতারাং অ্যান্ড্রয়েড বা অন্যান্য ব্যবহারকারীরা এ সুবিধা পাবে না। তবে চলতি বছর অ্যাপল, স্যামসাং, গুগল ও অ্যামাজন স্মার্ট হোমকে আরো উপযোগী করে তুলতে কাজ করছে। তথ্যানুযায়ী, ১০০টিরও বেশি স্মার্ট হোম পণ্য বাজারে আসবে।
স্বাস্থ্য সেবাদানকারী গ্যাজেটঃ সাম্প্রতিক স্বাস্থ্য সচেনতায় কিছু গ্যাজেট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো: অ্যাপল ওয়াচ ও ফিটবিট। এই ফিটনেস ডিভাইস আমাদের চলাফেরা ও হূদকম্পনের হিসাব রাখতে সাহায্য করে। টেক জায়ান্টগুলো আরো ক্ষুদ্র যন্ত্রে ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যের আরো বেশি তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে গবেষণা করছে। সম্প্রতি ফিনল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অরা একটি নতুন মডেল উদ্ভাবন করেছে। অরা রিং নামে মডেলটি শরীরের তাপমাত্রা পরখ করে ঋতুস্রাবের পূর্বাভাস দেয়।
চলতি বছর দি ইন্টারন্যাশনাল কনজিউমার ইলেকট্রনিকস শো (সিইএস) অনুষ্ঠানে অরার অনুরূপ একটি রিং প্রদর্শন করা হয়। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর শরীরের তাপমাত্রা ও হূদকম্পন বিচার করে সম্ভাব্য কোনো অসুখের কথা জানান দেবে রিংটি। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভুল তথ্য দেয়ার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মধ্যে হাইপোকন্ড্রিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
বৈদ্যুতিক গাড়িঃ পরিবেশ ভারসাম্য ঠিক রাখতে ও কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিশ্বে চলছে বৈদ্যুতিক গাড়ি উদ্ভাবনের প্রতিযোগিতা। গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের অর্ধেক গাড়ি বিদ্যুচ্চালিত হবে। চলতি সপ্তাহে সিইএস অনুষ্ঠানেও অটোমোবাইল প্রস্তুতকারকদের আলোচনার মুল লক্ষ্যই ছিল বৈদ্যুতিক গাড়ি। এক অনুষ্ঠানে ফোর্ড তার F-150 তার বৈদ্যুতিক পিকআপ, ট্রাকের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এদিকে সম্প্রতি জেনারেল মোটরস জানিয়েছে, শিগগিরই শেভরোলেট সিলভেরাডোর ব্যাটারিচালিত পিকআপ ট্রাক উদ্ভাবনের পরিকল্পনা রয়েছে।