।। নিউজ ডেস্ক ।।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে চুই ঝালের চাষ করে ভাগ্য ফিরেছে শতশত কৃষকের। চাষ করতে তেমন ঝামেলা নেই, খরচ কম এবং লাভ বেশি থাকায় বাড়ির উঠানে ও বাড়ির পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছে চুই ঝালের কাটিং লাগিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে এ মসলার জাতীয় ফসলের চাষ করছেন স্থানীয় কৃষক-কৃষাণীরা।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষাফেরুষা চওড়াবাড়ীর এলাকার কৃষক কাসেম আলী ও তার স্ত্রী সুকরন নেচ্ছা সুখালী বলেন, চুই ঝাল চাষে নিদিষ্ট জমি লাগে না। বাড়ির উঠানে আমগাছসহ সুপারি বাগানে চুই ঝাল চাষ করছি আমরা। গত তিন দিন আগে তিন বছর বয়সী ১৭ টি সুপারি গাছের চুই ঝালের গাছ ৩৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। এখনো আমাদের বাড়ির উঠানে আম গাছসহ ৫০ থেকে ৬০ টি সুপারির গাছে চুই আছে। তিন চার বছর পর ১ লক্ষ টাকায় সগুলো বিক্রি করতে পারবো।
একই এলাকার কৃষক জামাল মিয়া ও হোসেন আলী জানান, গত ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে চুই ঝালের চাহিদা বাড়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা চুই চাষে ঝুঁকছেন। খচর কম লাভ বেশি। অন্য কৃষকদের চুই বিক্রি করতে হাট-বাজারে যেতে হয় না। অধিকাংশ চুই ঝালের পাইকাররা কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ী এলাকা থেকে অঞ্চলে এসে প্রতিটি বাড়ির চুই ঝাল ক্রয় করেন। সম্প্রতি কাঁঠালবাড়ী এলাকার চুই পাইকারদের কাছে ২৫ হাজার টাকার চুই ঝাল বিক্রি করেছেন তারা।
একই ইউনিয়নের পূর্বফুলমতি ফকির পাড়া এলাকার কৃষক আমিনুল ইসলাম বাড়ীতে গিয়ে দেখা গেছে তার বাড়ির উঠানে শিমুল গাছের ১৫ হাজার টাকা মূল্যে চুই ঝালের গাছটি পরিচর্যা করছেন। তার স্বপ্ন এক দুই পর তিনি ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করবেন। তিনি গত এক মাস আগে একটি শিমুল গাছ ,একটি আম গাছ, চা গাছ ও একটি কাঁঠাল গাছের চুই বিক্রি করছেন ৬০ হাজার টাকায়। তিনি চুই ঝালের টাকা দিয়ে দুইটি মাঝারী সাইজের গরু কিনেছেন। তার মতে এ অঞ্চলের চাষিরা এভাবে চুই ঝাল চাষ করলে প্রতিটি পরিবার অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক পুলিন চন্দ্র রায় ও নির্মল চন্দ্র রায় জানান, দেশের দক্ষিণ অঞ্চল খুলনা ও যশোরের মানুষসহ সারা দেশের মানুষের কাছে মসলা জাতীয় চুই ঝালের চাহিদা থাকায় চুই ঝাল চাষে তাদের এলাকার শতশত কৃষক লাভবান হচ্ছেন। তারাও আমগাছ, সুপারিসহ বিভিন্ন গাছের পাশে চুই ঝাল লাগিয়েছেন।
লালমনিরহাট জেলার ভাটিবাড়ি এলাকার মজনু মিয়া ও উলিপুর এলাকার পাইকার মোজাম্মেল হক জানান, ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বালারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা বাড়ির উঠানে ও সুপারির বাগানে চুই ঝাল চাষ করেছে। ৫ থেকে ৭ বছর চুইয়ের চাষ কম থাকলেও চাহিদা থাকায় প্রতিটি পরিবার চুই ঝাল চাষে ঝুঁকছেন। আমরা প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে চুই ঝালের ব্যবসার সাথে জড়িত। চাষিদের বাড়িতে গিয়ে গাছে চুই ঝাল দেখে ক্রয় করে আসছি। শুধু ফুলবাড়ী উপজেলা নয় কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে চুই ঝাল ক্রয় করে দক্ষিণ অঞ্চলের খুলনা ও যশোরের পাইকারদের কাছে ভালটা ১২ থেকে ১৩ হাজার মাঝারীটা ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বিক্রি করেন। চুই ঝালগুলো খুলনা ও যশোরের বাসের ছাদে করে পাঠান। লেন দেন হয় সব বিকাশের মাধ্যমে। পাইকারও চুই ঝালের ব্যবসা করে প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করেন বলে জানান।
এই বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. নিলুফা ইয়াছমিন বলেন, দক্ষিণ অঞ্চলে চুই ঝালের চাষ ও ব্যবহার ব্যাপক। তবে উত্তরাঞ্চল যেমন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে চুই ঝালের চাষ দিনদিন বাড়ছে। আমরা কৃষি অফিসও প্রতিনিয়ত চুই ঝাল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছি। এখানকার শতশত কৃষক চুই ঝালের চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
সূত্রঃ ইত্তেফাক