।। নিউজ ডেস্ক ।।
উলিপুরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টির মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে ৩ ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়েছে। আতঙ্কে রয়েছে ওই এলাকার নারী ও শিশুরা। গ্রামগুলোতে ভাটা পড়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে। মজুরের অভাবে জমিতে নষ্ট হচ্ছে সবজি ক্ষেত। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির দুষ্টচক্র মামলা থেকে নাম প্রত্যাহারের কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গ্রেফতার আতঙ্কে ওইসব গ্রামে দিনের বেলা কিছু মানুষ চোখে পড়লেও বিকেল হওয়ার সাথে সাথে পুরুষশূন্য হয়ে পরে। এর ফলে হাটবাজারগুলোতে আগের মত থাকে না কোলাহল। মানুষ না থাকায় বিপাকে পড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের রামপ্রসাদ পাড়ার বাসিন্দা কৃষক বাবলু মিয়া (৬০) জানান, মামলার ভয়োত কামলারা পলাইছে। এ্যালা শাক তোলার কামলা পাবার নাগছি না। হামার এটে এবার ভালই শাকসবজি হইছে। কিন্তুক বর্তমানে এলাকাত পুরুষ মানুষ নাই। ফকির মিস্কিনও এই গ্রামোত আসপের চায় না।
একই ইউনিয়নের সাতদরগা গ্রামের মুদি দোকানদার জাহাঙ্গীর (৫৫) জানান, হামার এটে বেশিরভাগ পুরুষ মানুষ আর মাদরাসা ছাত্ররা বাড়ি ছাড়ি পালাইছে। মুই পঙ্গু মানুষ সাহস করি দোকানদারী করবের নাগছং। গণ্ডগোলের পর থাকি বেচাকেনা নাই। চা বেচেয়া কোনদিন দশ টেকা কোনদিন বা ২০ টেকা লাভ হয়। এই দিয়া কি সংসার চলে।
গত ১৩ অক্টোবরের ঘটনায় উলিপুর উপজেলায় ৩টি ইউনিয়নের ৫টি মন্দিরের মধ্যে গুনাইগাছ ইউনিয়নে ৩টি মন্দিরে হামলা করা হয়। এগুলো হচ্ছে পশ্চিম কালুডাঙ্গা ব্রাহ্মণ পাড়া দুর্গা মন্দির, পশ্চিম কালুডাঙ্গা সার্বজনীন দুর্গা মন্দির ও নেফড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দির ভাঙচুর করা হয়। এছাড়াও থেতরাই ইউনিয়নে হামলা করা হয় হোকডাঙ্গা ভারতপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দির এবং বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে বেগমগঞ্জ সার্বজনীন দুর্গা মন্দির। এ সময় দুর্বৃত্তরা মন্দিরসহ প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দিরে অগ্নিসংযোগ এবং বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
মামলার পর থেকে গুনাইগাছ ইউনিয়নের নেফড়া, কালুডাঙ্গা গ্রামের কাঠালীপাড়া, হাজীপাড়া, খারিজাপাড়া, মৌলভীপাড়া, পূর্বপাড়া, কালুডাঙ্গাপাড়া এবং থেতরাই ইউনিয়নের রামপ্রসাদ, হোকডাঙ্গা, কিশোরপুর, বকশিপাড়া, তেলিপাড়া, থেতরাই বাজার এলাকার ফকিরপাড়া, সাতদরগাহ্, বকশিরবাজার, দালালীপাড়া, মতুল্ল্যাটারী, বকশিপাড়া, নাপিতপাড়া, হাজীপাড়া, কানিপাড়া, তেলিপাড়া পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। দিনের বেলা নারী এবং বৃদ্ধরা বাজার ঘাট করলেও রাতের বেলা যেন এলাকা ফাঁকা হয়ে পড়ে। একদিকে পেটের জ্বালা অপরদিকে পুলিশী গ্রেফতার আতঙ্কে এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে কোন স্বস্তি নেই। পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ায় বিরুপ প্রভাব পড়েছে আশেপাশের গ্রামসহ হাট বাজারগুলোতে। বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
বিষয়টি নিয়ে উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইমতিয়াজ কবীর জানান, এখন পর্যন্ত ৬৬ জনকে আটক করা হয়েছে। বিভিন্ন তথ্যাবলি এবং ভিডিও’র মাধ্যমে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। নিরীহ কেউ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সে ব্যাপারে পুলিশ সজাগ রয়েছে। আর গ্রামের সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। দালাল চক্রের বিষয়টিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের নজরেও এসেছে এবং কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে।